শিশুরা কোনো কিছুর জন্য বায়না ধরলে বা জেদ করলে অনেকেই টুকটাক মিথ্যার আশ্রয় নেন। তাৎক্ষণিকভাবে শিশুকে শান্ত করার উদ্দেশ্যেই সাধারণত এমনটা করা হয়। বিষয়টিকে অনেক অভিভাবকই হালকা বিষয় মনে করে থাকেন। অথচ শিশুকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলা নাজায়েজ ও গুনাহের কাজ।
মূলত ‘তিন ক্ষেত্র ছাড়া মিথ্যা বলা বৈধ নয়- (১) মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসার জন্য মিথ্যা বলা (২) যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যা বলা এবং (৩) স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য মিথ্যা বলা।’ (আবু দাউদ: ৪৯২১) সুতরাং ওই তিন অবস্থা ছাড়া শরিয়তে মিথ্যা বলার অবকাশ নেই। শিশুদেরকেও মিথ্যা বলা যাবে না। তাছাড়া শিশুরা অনুকরণপ্রিয় হয়ে থাকে। শৈশবে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সে যা শিখছে আগামীর জন্য সেটাই তার পাথেয়। বলা যায় ‘মিথ্যা সান্ত্বনা’র মাধ্যমে অবচেতন মনে শিশুকে মিথ্যাই শেখানো হয়।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: সন্তানের জন্য পাঁচটি দোয়া করতে ভুলবেন না
কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক, শৈশব থেকেই শিশুদের মিথ্যার প্রতি ঘৃণা তৈরি করা উচিত, কিন্তু অভিভাবকের কাছ থেকে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হলে মিথ্যাকে তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয় মনে হবে। তাই এ বিষয়ে অভিভাবকের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য।
কিশোর সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনু আমির (রা.) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের বাড়িতে বসা ছিলেন, এমতাবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বললেন, এসো তোমাকে একটি জিনিস দেব। রাসুলুল্লাহ বললেন, তুমি তাকে কী দিতে চাও? মা বললেন, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে চাই। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার নামে একটি মিথ্যার গুনাহ লেখা হতো।’ (আবু দাউদ: ৪/২৯৮)
মিথ্যা পরিহারের কঠিন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে হেদায়াত দেন না, যে সীমা লঙ্ঘনকারী, মিথ্যাবাদী’ (সুরা গাফির: ২৮)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মিথ্যা পরিহার করো। কেননা মিথ্যা পাপের পথে পরিচালিত করে। আর পাপ মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়।’ (তিরমিজি: ১৯৭১)
বিজ্ঞাপন
মিথ্যাকে বলা হয় সব পাপের জননী। ইসলামে মিথ্যা এমন ঘৃণিত যে মজা করার জন্য বা দুষ্টুমির ছলেও মিথ্যা বলা জায়েজ নেই। নবী (স.) বলেছেন- ‘সেই লোক ধ্বংস হোক! যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সেই লোক নিপাত যাক, সেই লোক নিপাত যাক!’ (তিরমিজি: ২৩১৫)
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধরো। কারণ সত্য পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। কোনো ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বললে এবং সর্বদা সত্যের অনুসন্ধানী হলে সে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো। কারণ মিথ্যা পাপাচারের রাস্তা দেখায় আর পাপাচার জাহান্নামের রাস্তা। কোনো ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বললে এবং সর্বদা মিথ্যার অনুসন্ধানী হলে সে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীরূপে পরিগণিত হয়।’ (মুসলিম: ২৬০৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব রকম মিথ্যা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

