ইসলাম স্বভাবজাত ধর্ম। মানুষের পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য ও সুস্থতা রক্ষার গুরুত্ব রয়েছে ইসলামে। ইরশাদ হয়েছে, ‘পাঁচটি জিনিস মানুষের স্বভাবজাত বিষয়: খতনা করা, ক্ষৌরকার্য করা (নাভির নিচের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা), বগলের চুল উপড়ানো, নখ কাটা ও গোঁফ ছোট করা।’ (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত: ৪৪২০)
মানুষের শরীরের অবাঞ্ছিত লোম, নখ ইত্যাদি বিনা ওজরে ৪০ দিন পর কাটাকে মাকরুহে তাহরিমি বা গুনাহের কাজ বলা হয়েছে হাদিসে। এ মর্মে সাহাবি আনাস (রা.) বলেন, ‘গোঁফ ছোট রাখা, নখ কাঁটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং নাভির নিচের লোম ছেঁচে ফেলার জন্যে আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যেন আমরা তা করতে ৪০ দিনের বেশি দেরি না করি।’ (মুসলিম: ২৫৮)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: স্বামী কতদিন স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবে?
তবে অনেকে মনে করে থাকেন, ৪০ দিন অতিক্রম হয়ে গেলে ইবাদত কবুল হয় না; এই ধারণা সঠিক নয়। মানুষ ব্যস্ততাসহ নানা কারণে ভুলে যেতে পারে। তাই বলে কোনো ইবাদতই কবুল হবে না—এই কথার ভিত্তি নেই। তবে হ্যাঁ, অবহেলাবশত ইচ্ছাকৃতভাবে এই মেয়াদ অতিক্রম করলে গুনাহ হবে। কেননা হাদিসে নবীজি (স.) এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন।
অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা শুরু হয় পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নিচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় সেখান থেকেই। ওই ভাঁজ থেকে দুই উরু পর্যন্ত ডান বামের লোম, গোপনাঙ্গের চার পাশের লোম, অণ্ডকোষ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত উদগত লোম এবং প্রয়োজনে মলদ্বারের আশেপাশের লোম অবাঞ্ছিত লোমের অন্তর্ভুক্ত। (আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা কুয়েতিয়্যা: ৩/২১৬-২১৭, মরদূকে লেবাস আউর বালূঁকে শরয়ি আহকাম: ৮১)
বিজ্ঞাপন
ব্লেড, ক্ষুর বা কাঁচি দ্বারা গোপনাঙ্গের লোম পরিষ্কার করা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য জায়েজ। একইভাবে হেয়ার রিমুভার জাতীয় কেমিক্যাল দিয়ে পরিষ্কার করাতেও শরিয়তের বাধা-নিষেধ নেই। তবে পুরুষের জন্য ছেঁচে ফেলা এবং নারীদের জন্য উপড়িয়ে ফেলা মোস্তাহাব। (কিতাবুল ফিকাহ আলাল মাজাহিবিল আরবাআ: ২/৪৫)
যদি কেউ ছেঁচে ফেলার পরিবর্তে অন্য কোনোভাবে পরিষ্কার করে তাহলে তা সুন্নাহ অনুযায়ী হবে না। (কিতাবুন নাওয়াজিল: ১৫/৫৪৭)
অনেকে অবাঞ্ছিত লোম কাটলে রোজা ভেঙে যায় কি না জানতে চান। না, এতে রোজা ভাঙে না। এমন কোনো বিধান শরিয়তে নেই। মূলত ‘রোজা নষ্ট হবার সম্পর্ক হলো পানাহার ও সহবাসের সঙ্গে’ (মুসান্নাফ আবদুর রাজজাক: ৭৪৬৮)। তাই রোজা অবস্থায় এসব কাজে বাধা নেই। আর অবাঞ্ছিত লোম কাটার পর গোসলও ফরজ হয় না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেকটি কাজে নবীজির সুন্নতকে গুরুত্ব দেওয়ার এবং সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।