শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

ইসলামে বেশি লাভে পণ্য বিক্রির শর্ত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ইসলামে বেশি লাভে পণ্য বিক্রির শর্ত

ইসলামি শরিয়তে পণ্য বিক্রয়ে লাভের নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই, বরং যেকোনো পণ্য ক্রেতা-বিক্রেতার সন্তুষ্টিতে যেকোনো মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ। অর্থাৎ ব্যবসার লভ্যাংশ হালাল হওয়ার জন্য শুধু ক্রেতার সম্মতি ও সন্তুষ্ট থাকাটাই জরুরি। নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য অন্য কোনো মুসলমানের মাল তার অন্তরের সন্তুষ্টি ছাড়া হালাল হবে না। (তালখিসুল হাবির: ১২৪৯)

হাদিস শরিফে এসেছে, উরওয়া বারিকি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) একটি বকরি কিনে দেওয়ার জন্য তাকে একটি দিনার দেন। তিনি ওই দিনার দিয়ে দুটি বকরি কেনেন। অতঃপর এক দিনার মূল্যে একটি বকরি বিক্রি করে দিলেন এবং নবী (স.)-এর খিদমতে একটি বকরি ও একটি দিনার নিয়ে উপস্থিত হলেন। তা দেখে তিনি তার ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত হওয়ার জন্য দোয়া করেন। পরে তার অবস্থা এমন হলো যে ব্যবসার জন্য যদি মাটিও তিনি কিনতেন তাতেও তিনি লাভবান হতেন। (বুখারি: ৩৬৪২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ইসলামে জলদি ঘুমানোর তাগিদ কেন?

এই হাদিসে দেখা যায়, একটি বকরিতে ১০০ শতাংশ লাভ করার পরও নবী (স.) কোনো আপত্তি করেননি; বরং তার জন্য দোয়া করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, বিক্রেতা কত টাকা লাভ করবে—সে ব্যাপারে তার স্বাধীনতা আছে। ক্রেতার পণ্য পছন্দ হলে বাজারদর যাচাই-বাছাই করে সে দামে ক্রয় করবে অথবা করবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; তবে যদি তা তোমাদের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসার মাধ্যমে হয়, তাহলে ভিন্ন কথা।’ (সুরা নিসা: ২৯)

মনে রাখতে হবে, ইসলাম একইসঙ্গে ব্যবসায়ীকে কিছু নীতি-নৈতিকতা অবলম্বন করার তাগিদ দিয়েছে। যেমন—দাম চাওয়ার ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা যাবে না। মজুদদারি করবে না। পণ্যের দাম সম্পর্কে ক্রেতার অজ্ঞতার সুযোগে তাকে ঠকাবে না। অর্থাৎ কোনো ধরনের ধোঁকাবাজি, ভেজাল, মিথ্যাচার ও ফাঁক-ফোকর থাকা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তুমি তোমার নিজের জন্য যা ভালোবাসো তা অন্যের জন্যও ভালোবাসার আগ পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারি: ১৩)

অন্য হাদিসে নবীজি (স.) হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২৩১৪৭; সহিহ মুসলিম: ১৬৪; ইবনে মাজাহ: ২২২৫; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪৯০৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: আল্লাহ মুসলমানদের কেন প্রকৃত মুসলিম হওয়ার নির্দেশ দিলেন

ইসলামি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অভাব, মহামারি ও সংকটময় মুহূর্তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সীমাতিরিক্ত লাভে বিক্রি করা বৈধ নয়। যেমন চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ওষুধ ইত্যাদি যথাসম্ভব কম লাভে বিক্রি করবে। ক্রেতার উপর জুলুম হচ্ছে কি না সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যে নম্রতার সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় করে এবং পাওনা ফিরিয়ে দিতে চায়’ (বুখারি: ২০৭৬)। ‘জুলুম/নির্যাতন কেয়ামতের দিন অন্ধকাররূপ ধারণ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ২৩১৫)

উপরোক্ত দলিলাদির আলোকে এ কথা স্পষ্ট যে, ক্রয়-বিক্রয়ের নির্ধারিত শর্ত ‘প্রস্তাব-সম্মতি’ ঠিক থাকার কারণে ব্যবসা সম্পন্ন হয়ে যাবে ঠিক, কিন্তু জুলুম-নির্যাতন, ধোঁকাবাজির গুনাহ অবশ্যই হবে। (তথ্যসূত্র: হেদায়া: ৩/৫২, ৩/৬৭; ইমদাদুল ফতোয়া: ৩/১৯; আবকে মাসায়েল আউর উনকা হল: ৬/২৭; জামেউল ফতোয়া: ৬/৬২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর