সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

মজলিসে জিকিরের ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৬:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

মজলিসে জিকিরের ফজিলত

জিকির হচ্ছে আল্লাহর স্মরণ। আর মজলিস মানে বৈঠক বা বসার স্থান। সাধারণত দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে কোথায় বসলে তাকে মজলিস বলে। ইসলামে জিকিরের মজলিসের গুরুত্ব, মর্যাদা ও ফজিলত অনেক। হাদিস অনুযায়ী, যেখানে আল্লাহর জিকির করা হয় সেখানে আসমান থেকে অবিরত রহমত  নাজিল হতে থাকে। 

দুনিয়াতে জিকিরের মজলিসগুলো খুঁজে বের করে তাদের প্রতি রহমতের ছায়াদানের জন্য একদল ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁরা সারা দুনিয়া জিকিরের মজলিস অনুসন্ধান করতে ঘুরে বেড়ান। যখন আল্লাহর স্মরণকারী কোনো মজলিস তাঁরা পেয়ে যান আসমান-জমিন পরিধি নিয়ে সে মজলিসকে তাঁরা ঘিরে রাখেন।


বিজ্ঞাপন


জাবির (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (স.) আমাদের থেকে বের হলেন এবং বললেন, ‘হে লোক সকল! আল্লাহর একদল ফেরেশতা রয়েছে। তারা কোনো জিকিরের মজলিস পেলে সেখানে অবস্থান করেন। অতঃপর তোমরা জান্নাতের বাগানের ফল খাও।’ আমরা বললাম, জান্নাতের বাগান কোথায় হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, ‘জিকিরের মজলিসগুলো জান্নাতের বাগান’। (আবি ইয়ালা: ২১৩৮)

আরও পড়ুন: জান্নাতের প্রাসাদ কেমন হবে?

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যখনই কিছু মানুষ একত্র হয়ে আল্লাহর জিকিরে রত হয়, এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া কিছু চায় না, তখনই আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী তাদের ডেকে বলেন, তোমরা পরিপূর্ণ ক্ষমাপ্রাপ্ত-গুনাহমুক্ত হয়ে উঠে যাও, তোমাদের পাপগুলোকে পুণ্যে রূপান্তরিত করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/১৪২; হাইসামি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/৭৬)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ কেয়ামতের দিন বলবেন, আজ জমায়েতের দিনে সবাই জানবে কারা সম্মানের অধিকারী। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, সম্মানের অধিকারী কারা? তিনি বলেন, মসজিদের ভেতরে জিকিরের মজলিসগুলো।’ (হাইসামি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/৭৬)


বিজ্ঞাপন


অন্য হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল, জিকিরের মজলিসের গনিমত (লাভ) কী? তিনি বললেন, জিকিরের মজলিসের গনিমত জান্নাত।’ (মুসনাদে আহমদ: ২/১৭৭, ১৯০; আত তারগিব: ২/৩৮১; হাইসামি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/৭৮)

আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি

জিকিরকারীরা ফেরেশতাদের রক্ষণাবেক্ষণে থাকেন। ফলে শয়তান পালায়। ‘মানুষের অন্তঃকরণে রয়েছে দুটি প্রকোষ্ঠ। একটিতে থাকে ফেরেশতা এবং অন্যটিতে থাকে শয়তান। অন্তরে জিকির উত্থিত হলে শয়তান পালিয়ে যায়। আর জিকির না থাকলে শয়তান অন্তরে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেয় তার নিজস্ব চিন্তা।’ (তাফসিরে মাজহারি: ৬/৩০০)

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম জিকির। জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দার এক ধরনের সংযোগ সৃষ্টি হয়। হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক হই এবং আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমার জিকির করে। যদি সে তার মনে মনে আমার জিকির করে আমি তাকে আমার কুদরতি মনে জিকির করি। আর যদি সে আমাকে মজলিসে গণজমায়েতে জিকির করে তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়েও উত্তম মজলিসে স্মরণ করি।’ (বুখারি-৭৪০৫, মুসলিম: ২৬৭৫)

আর যে মজলিসে সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক, পারিবারিক ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু আল্লাহর জিকির বা নবীজির ওপর দরুদ সম্পর্কে কোনো কথা না থাকে, সেই মজলিস আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে বলে উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি কিছু মানুষ এমন কোনো বৈঠক শেষ করে উঠে যায়, যে বৈঠকে তারা আল্লাহর জিকির করেনি, তারা যেন একটি গাধার মৃতদেহ (ভক্ষণ করে বা ঘাঁটাঘাঁটি করে) রেখে উঠে গেল। আর এ বৈঠক তাদের জন্য আফসোসে পরিণত হবে।’ (আবু দাউদ: ৪২, কিতাবুল আদাব, সনদ সহিহ)

আরও পড়ুন: মুমিনের প্রতিটি দিনই যেভাবে মহামূল্যবান

যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে না; উভয়ের মধ্য আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারেরা! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর।’ (সুরা আহজাব: ৪১)। অন্য এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব।’ (সুরা বাকারা: ১৫২)। হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার জিকির করে আর যে জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের মতো।’ (বুখারি: ৮/৬৪০৭)।

আল্লাহ তাআলার জিকির এমন একটি আমল, বান্দা যতই এ আমল করবে, ততই তার কলবের রৌশন বাড়তে থাকবে, অন্তরের প্রশান্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। প্রত্যেক সুফি-দরবেশ জিকিরের আমলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরে তাদের অন্তঃকরণ প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো, আল্লাহর জিকিরই অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করে’ (সুরা রাদ: ২৮)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন আমার বান্দা আমাকে স্মরণ করে এবং তার ঠোঁট আমার স্মরণে নড়াচড়া করতে থাকে তখন আমি তার সঙ্গে থাকি।’ (ইলম ও জিকির: ১৩১) 

মনে রাখতে হবে, জিকিরের মজলিসে বসলে এর আদব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই মজলিসকে কেন্দ্র করে যেন কোনো ধরনের বিপর্যয় বা সীমা লঙ্ঘন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আল্লাহর ভয় এবং আদবের সঙ্গে জিকিরের মজলিস পরিচালনা করতে হবে। অন্যথায় সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহের আশঙ্কাই বেশি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মজলিসে জিকির করার ও মজলিসের আদব রক্ষার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হওয়া থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর