রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জান্নাতিরাও আফসোস করবেন যে কারণে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

জান্নাতিরাও আফসোস করবেন যে কারণে
প্রতীকী ছবি

পবিত্র কোরআনে মুমিনদের বিভিন্ন গুণাবলির কথা বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ হলো অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। তাই বেহুদা কথা বা কাজ নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি ইসলামে। হাদিসে এসেছে-

“কোনো ব্যক্তির জন্য ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা।” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)


বিজ্ঞাপন


কোরআনে সফল মুমিনদের সাতটি বৈশিষ্ট্যের বর্ণনায় দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে— ‘যারা অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ৩)

শুধু তাই নয় এটাও তাদের বৈশিষ্ট্য যে, কেউ যখন তাদের সঙ্গে অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হতে চায় তখন অত্যন্ত ভদ্রভাবে তাকে এড়িয়ে চলে। অন্য আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে—

“তারা যখন অবাঞ্ছিত কথাবার্তা শোনে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে—আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গে জড়িত হতে চাই না।” (সুরা কাসাস: ৫৫)

সুতরাং সত্যিকারের মুমিন হতে অনর্থক কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকা একান্ত জরুরি। এছাড়া বেহুদা গল্প-গুজব জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করারও বড় একটি কারণ। জাহান্নামিরা নিজেদের মুখেই সেটি স্বীকার করবে।


বিজ্ঞাপন


“জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তোমরা জাহান্নামে প্রবেশ করেছ? তখন তারা বলবে— আমরা নামাজ পড়তাম না, মিসকিনদের খাদ্য দিতাম না, অনর্থক গল্প-গুজবকারীদের সঙ্গে গল্প-গুজব করতাম এবং কেয়ামত দিবসকে অবিশ্বাস করতাম।’ (সুরা মুদদাসসির: ৪২-৪৬)

এমনকি জান্নাতিগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পরেও দুনিয়াতে আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত যেসব সময় অনর্থক কথা ও কাজে অতিবাহিত করেছিলেন তার জন্য আফসোস করবেন। তাহলে জাহান্নামিদের আফসোস কত বেশি হবে তা তো বলাই বাহুল্য। এ সম্পর্কে হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

‘জান্নাতিদের জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস থাকবে না। শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস হবে, যা আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অনর্থক কথা বা কাজে অতিবাহিত হয়েছে।’ (বায়হাকি: ৫০৯)

পক্ষান্তরে অনর্থক কথাবার্তা হতে বিরত হয়ে নীরব থাকার বিরাট ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এ সম্পর্কে হজরত ইমরান ইবনে হুসাঈন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির (অনর্থক কথাবার্তা হতে) নীরব থাকায় যে মর্যাদা লাভ হয় তা ৬০ বছরের নফল ইবাদত হতেও উত্তম।’ (বায়হাকি: ৪৬০২)

মানুষকে আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যেও অনর্থক কথা বলার অনুমতি নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—

আর যদি সে কথাগুলো হয় মানুষকে কষ্ট দিতে, তা তো আরো বিপজ্জনক। কবি ইয়াকুব হামদুনি বলেছেন, ‘তরবারির ক্ষতের আরোগ্য আছে, কিন্তু জিবের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতের আরোগ্য নেই। ’ (তাজুল উরুস, পৃষ্ঠা ৩৭৩)

অনর্থক গল্প-গুজবে মশগুল থেকে যারা জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কেয়ামত দিবসে ভয়াবহ পরিণতির জন্যে অপেক্ষা করতে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেন—

‘অতএব, আপনি তাদেরকে ছেড়ে দিন, তারা অনর্থক কথাবার্তা ও খেলতামাশায় লিপ্ত থাকুক সেই দিনের সম্মুখীন হওয়া পর্যন্ত, যে দিনের ওয়াদা তাদের সঙ্গে করা হয়েছে। সে দিন তারা কবর থেকে দ্রুত বেগে বের হবে, যেন তারা কোনো এক লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যাচ্ছে। তাদের দৃষ্টি থাকবে নিচু; সেদিন তারা চরমভাবে অপমানিত হবে। এটাই সে দিন, যার ওয়াদা তাদেরকে দেওয়া হতো।’ (সূরা মাআরিজ : ৪২-৪৪)

আল্লাহ তায়ালার এতো বড় ধমকির পরেও যদি আমরা সতর্ক না হই তাহলে এটা হবে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ। এর পরিণতি হবে অত্যন্ত মন্দ ও ভয়াবহ।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছেন— ‘নিশ্চয় বান্দা পরিণাম চিন্তা না করেই এমন কথা বলে যে কথার কারণে সে ঢুকে যাবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্বের চেয়েও বেশি।’ (বুখারি: ৬৪৭৭)

অতএব আমাদের উচিত, সব ধরনের অনর্থক কথা ও কাজ বর্জন করা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনোনিবেশ করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময়ের সদ্ব্যবহার করার তওফিক দান করুন। আমিন।

এমএ/

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর