বন্ধু নির্বাচনে সাধারণত মানুষ ধনী বা প্রভাবশালীদের প্রাধান্য দেয়। ওই ধনী বা প্রভাবশালীর মধ্যে আল্লাহর স্মরণ কিংবা তাকওয়া আছে কি না, দেখা হয় না। অথচ পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা।
“তুমি দৃঢ়চিত্ত হয়ে তাদের সঙ্গে অবস্থান করো, যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রতিপালককে আহ্বান করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের সন্ধানে। পার্থিব জীবনের শোভা ও চাকচিক্য কামনায় তুমি তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না। তুমি তার আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে উদাসীন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির আনুগত্য করে আর যার কার্যকলাপ সীমালঙ্ঘনমূলক।’ (সুরা কাহাফ: ২৮)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা জিকিরকারীদের দূরে সরিয়ে দুনিয়ার সৌন্দর্যপিপাসু আল্লাহভোলাদের পেছনে পড়তে নিষেধ করেছেন।
এখানে লক্ষণীয়, সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মানুষ যার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে, ওঠা-বসা করে তার ব্যক্তিত্বের প্রভাব নিজের ওপর পড়তে শুরু করে। রাসুলুল্লাহ (স.) এ বিষয়টি খোলাসা করেছেন এভাবে—
‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৩)
সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর পার্থক্য
বিজ্ঞাপন
‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উপমা হলো কস্তুরী বহনকারী (আতর বিক্রেতা) ও কামারের হাপরের মতো। মৃগ কস্তুরী বহনকারী হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে বা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি লাভ করবে সুবাস। আর কামারের হাপর তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, নয়তো তার কাছ থেকে পাবে দুর্গন্ধ।’ (বুখারি: ৫১৩৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’(সুরা ফুরকান: ২৭-২৯)
যারাই রাসুল (স.) এর প্রদর্শিত পথে না চলে অন্য কারও পথে চলবে, তারাই হাশরের মাঠে আফসোস করতে থাকবে এবং নিজের আঙুল কামড়াতে থাকবে। কিন্তু তখন তাদের সে আফসোস কোনো উপকারে আসবে না।
তাই কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে আগে যাচাই করা উচিত, লোকটি ঈমানদার কি না। এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে মহানবী (স.) বলেন—
‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন আল্লাহভীরু মানুষ খায়।’(আবু দাউদ: ৪৮৩২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক বন্ধু যাচাইয়ের যোগ্যতা দান করুন। হাশরের কঠিন মসিবতে যেন আফসোসকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে না হয়, সেজন্য সুন্নাহভিত্তিক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।