কেয়ামতের আগে পাপের নানা উপকরণ প্রকাশ পাবে। ঘরে ঘরে পাপের এসব উপকরণের মাধ্যমে পাপ করার পথ উন্মুক্ত থাকবে। প্রিয়নবী (স.) এ বিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। উসামা ইবনে জায়িদ (রা.) বলেন, ‘একবার নবী (স.) মদিনার টিলাগুলোর একটির ওপর উঠে বলেন, আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? জবাবে সাহাবায়ে কেরাম বলেন, না। তখন নবী (স.) বললেন, অবশ্যই আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ফিতনা (পাপ ও বিশৃঙ্খলা) বৃষ্টির মতো পতিত হচ্ছে।’ (সহিহ বুখারি: ৭০৬০)
উল্লেখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) মুসলিম উম্মাহকে অনাগত দিনের বিশৃঙ্খলা ও পাপাচার সম্পর্কে সতর্ক করেছেন, যেন তারা পাপের স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে।
বিজ্ঞাপন
নবীজির সেই ভবিষ্যদ্বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। প্রিয়নবী (স.) না বললে কেউ ধারণাও করতে পারত না যে এমন একটা সময়ের মুখোমুখি হবে মুসলিম উম্মাহ। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহজলভ্য হওয়ায় দ্রুতগতিতে পাপাচার ছড়িয়ে পড়ছে, যা নবীজির ভবিষ্যদ্বাণীরই বহিঃপ্রকাশ। এছাড়াও গান-বাজনা, মাদক, সুদ, ঘুষ ও অশ্লীলতার এমন সব উপকরণ প্রকাশ পাচ্ছে, যাতে করে মানুষ সহজেই পাপে নিমজ্জিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় কঠিন হলেও নিজেকে পাপ থেকে রক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব। সফল তো ওই ব্যক্তি, যে সুযোগ থাকার পরও আল্লাহর শাস্তির ভয়ে পাপ ও অন্যায় থেকে আত্মসংবরণ করে। আর হতভাগ্য ও ধ্বংস প্রাপ্ত ওই ব্যক্তি, যে শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে কিংবা কামনা-বাসনার ডাকে সাড়া দিয়ে পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকারে হারিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: যে নামাজে সব গুনাহ মাফ
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যে নিজের আত্মাকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্র করে সে সফল হয়, আর যে তাকে কলুষিত করে ধ্বংস হয়।’ (সুরা শামস: ১০)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা অবিচারকারী কেবল তাদেরই কষ্ট দেবে না। জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।’ (সুরা আনফাল: ২৫)
বিজ্ঞাপন
ফিতনার সময় করণীয় হলো আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা। হজরত হুজাইফা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, মানুষের ওপর এমন একটা যুগ আসবে যখন কেউ রক্ষা পাবে না, সে ছাড়া যে দোয়া করছে, ডুবন্ত মানুষের দোয়ার মতো। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৩৬৪৪৭)
অর্থাৎ নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তি যেভাবে বাঁচার আকুতি নিয়ে দোয়া করতে থাকে, সেভাবে দোয়া করা।
আরও পড়ুন: কেয়ামতের আগে যেসব ঘটনা বেড়ে যাবে
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো চুপ থাকা। প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘ফিতনার সময় ঈমানদারের করণীয় হলো- সর্বদা চুপ থাকা। এত পরিমাণ চুপ থাকা, যার কারণে কোনো ফিতনা তাকে আকৃষ্ট করতে না পারে। (আল ফিতান: ৭৩৫) পাশাপাশি নিজের নজরের হেফাজত করা। ফিতনার বিষয় সম্পর্কে জানাতেও বের না হওয়া। ফিতনার দিকে দৃষ্টি বা উঁকি না দেওয়া এবং ফিতনার দিকে না যাওয়া। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে, ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। তখন কেউ যদি কোনো আশ্রয়ের জায়গা কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন আত্মরক্ষা করে।’(বুখারি: ৭০৮১)
পাপ ও পাপের উপকরণ থেকে মুক্ত থাকা আদর্শ মুসলিম পরিবারের বৈশিষ্ট্য। কেননা পাপের উপকরণ পাপকাজে উৎসাহিত করে এবং পারিবারিক শৃঙ্খলা ও শান্তি নষ্ট করে। তাই যে উপকরণের মন্দ ব্যবহার বেশি তা অবশ্যই পরিহার করবে। আবদুর রহমান হাসান জানকা বলেন, ‘ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে বিচ্ছেদ ও দ্রোহের আগুন নেভাতে শিকড় থেকে চরিত্র সংশোধন করতে হবে। কেননা পাপে মত্ত ব্যক্তিরাই পরিবার ও আপনজন থেকে দূরে সরে যেতে চায়। পাপ তার ভেতর অস্থিরতা দূর করে।’ (আল আখলাকুল ইসলামিয়া ও আসাসুহা: ১/৩৮)
আরও পড়ুন: জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচাবেন যেভাবে
সময়ের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা আদর্শ মুসলিম পরিবারের জন্য অপরিহার্য। বিশেষত পরিবারের নামাজ, ইবাদত ও দীনি জ্ঞানচর্চায় সময়ের শৃঙ্খলা থাকা আবশ্যক। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষত মধ্যবর্তী নামাজের এবং আল্লাহর উদ্দেশে তোমরা বিনীত হয়ে দাঁড়াও।’ (সুরা বাকারা: ২৩৮)
এছাড়াও পরকালের ভয় অন্তরে জাগ্রত করা ফিতনা ও নানাবিধ পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ আমল। হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রত্যেক বান্দাকে ওই অবস্থায় কিয়ামতের দিন উঠানো হবে যে অবস্থার ওপর সে মৃত্যু বরণ করেছে। মুমিনকে উঠানো হবে ঈমানের ওপর এবং মুনাফিককে উঠানো হবে নিফাকির ওপর।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৭৩১৩)
আরও পড়ুন: কোরআনের বর্ণনায় পৃথিবী-মহাকাশ ধ্বংস হবে যেভাবে
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হেদায়াত দান করুন। পাপাচার থেকে মুক্ত থাকার এবং পাপের উপকরণ, নানাবিদ ফিতনা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

