বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

অহংকার জাহান্নামিদের চরিত্র, নিজেকে যাচাই করুন একবার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৪:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

অহংকার জাহান্নামিদের চরিত্র, নিজেকে যাচাই করুন একবার

অহংকার নেক আমল ও সওয়াবকে নষ্ট করে দেয়। যার অন্তরে অহংকার আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না বলে একাধিক হাদিস থেকে প্রমাণিত। সহিহ মুসলিমে ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে—لا يدخلُ الجنَّةَ من كانَ في قلبِه مثقالُ ذرَّةٍ مِن كِبرِ ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’

অনেকে অন্তরে অহংকার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও নিজেকে অহংকারমুক্ত মনে করেন। উপলব্ধিই করতে পারেন না যে, তার মনে অহংকার বাসা বেঁধেছে। নিচের পয়েন্টগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন আপনার মধ্যে অহংকার আছে কি না।


বিজ্ঞাপন


১. নিজেকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্যকে তুচ্ছ ভাবার বদভ্যাস থাকলে বুঝে নেবেন আপনি নিশ্চিত অহংকারী। ঠিক এই দোষেই অভিশপ্ত হয়েছিল ইবলিস। 

হজরত আদম (আ.)-কে সেজদা দেওয়ার নির্দেশের বিরোধিতায় সে আল্লাহ তাআলাকে যুক্তি দেখিয়েছিল, ‘আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে’ (সুরা আরাফ: ১২)। অতএব, ‘আমি কি তাকে সেজদা করব, যাকে আপনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন?’ (সূরা ইসরা: ৬১)। এই অহংকারের প্রতিউত্তর আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে এভাবে দিয়েছেন— ‘বের হয়ে যাও এখান থেকে। কেননা তুমি অভিশপ্ত।’ (সূরা সোয়াদ: ৭৬)

আরও পড়ুন: ইবলিস কোন শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আদমকে সেজদা করেনি?

২. সত্যকে অস্বীকার করার বদভ্যাস অহংকারের অন্যতম আলামত। নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাব, উতবা, শায়বা, আরও অসংখ্য দাম্ভিক সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফেরাউন বলেছিল, আমি তোমাদের বড় রব। সুতরাং সত্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা থাকলে বুঝে নিতে হবে যে আপনার ভেতরে লালিত হচ্ছে ঘৃণ্য অহংকার। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। তখন এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, লোকেরা চায় যে তাদের পোশাক সুন্দর হোক, জুতা জোড়া সুন্দর হোক। জবাবে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হলো সত্যকে দম্ভের সঙ্গে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।’ (মুসলিম: ৯১)


বিজ্ঞাপন


৩. হাঁটাচলায় বড়ত্ব প্রকাশ করা অহংকারীদের কাজ। বর্তমান সমাজে দেখা যায়—পেছনে দলবল নিয়ে কিছু মানুষ এমনভাবে চলেন যেন আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ। এ ধরণের সামান্য লক্ষণ দেখেই হজরত ওমর (রা.) সাবধান করেছিলেন উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে। হজরত উবাই (রা.)-এর পেছন পেছন একদল লোককে চলতে দেখে তিনি তাঁকে চাবুক দিয়ে আঘাত করলেন। এতে চমকে উঠে তিনি জিজ্ঞেস করলেন—ব্যাপার কী হে আমিরুল মুমিনিন! জবাবে খলিফা বলেন, ‘এটা অনুসরণকারীর জন্যে লাঞ্ছনাকর এবং অনুসৃত ব্যক্তিকে ফেতনায় (অহংকারে) নিক্ষেপকারী।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৩১২৪৪)

আরও পড়ুন: ওমর (রা.) যেসব কারণে ইতিহাসে অনন্য

৪. অর্থ-সম্পদ ও সৌন্দর্যের কারণে অন্যের প্রতি অন্তরে তুচ্ছভাব উদ্রেক হওয়াটা অহংকারের লক্ষণ। একদিন সাহাবি আবু জর গিফারি (রা.) হাবশি বেলাল (রা.)-কে তাঁর কালো মায়ের দিকে ইঙ্গিত করে তাচ্ছিল্য করলে রাসুল (স.) তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন— ‘হে আবু জর! তুমি তাকে তার মায়ের নামে তাচ্ছিল্য করলে? তোমার মধ্যে জাহেলিয়াত রয়েছে।’ (বুখারি: ৩০)

৫. দরিদ্র মানুষ ও অধীনস্থদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা অহংকারের একটি বড় আলামত। প্রভাব খাটিয়ে যারা এদের হক নষ্ট করে তাদের শাস্তি অত্যন্ত লাঞ্ছনাকর। এধরণের ব্যক্তিতে কেয়ামতের দিন পিঁপড়াসদৃশ করে লাঞ্ছনাকর অবস্থায় হাঁটানো হবে। (তিরমিজি: ২৪৯২)

৬. ভুল স্বীকার না করা এবং নিজের ভুল অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অহংকারীদের কাজ। আবদুর রহমান বিন মাহদি (রহ.) বলেন, আমরা এক জানাজায় ছিলাম। সেখানে ওবায়দুল্লাহ বিন হাসান উপস্থিত ছিলেন, যিনি তখন রাজধানী বাগদাদের বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন। আমি তাঁকে একটি মাসয়ালা জিজ্ঞেস করলে তিনি ভুল জবাব দেন। তখন আমি বললাম, ‘আল্লাহ আপনাকে সংশোধন হওয়ার তাওফিক দিন! এ মাসয়ালার সঠিক জবাব হলো এই, এই। তখন তিনি কিছুক্ষণ দৃষ্টি অবনত রাখেন। অতঃপর মাথা উঁচু করে দুইবার বলেন, ‘এখন আমি প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি লজ্জিত।’ অতঃপর বলেন, ‘ভুল স্বীকার করে হকের লেজ হওয়া বাতিলের মাথা হওয়ার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয়।’ (তারিখু বাগদাদ: ১০/৩০৮)

৭. নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবা অহংকারের বড় আলামত। মানুষ ও সকল প্রাণী আল্লাহর দয়ায় চলে। কাউকেই আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ করেননি। তাই যারা নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে অন্যকে অবজ্ঞা করে তাদের ব্যাপারে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ অবশ্যই সীমা লঙ্ঘন করে। কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।’ (সূরা আলাক: ৬-৭)

আরও পড়ুন: দুনিয়াতে অহংকারীর শাস্তি

দলিলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে, অহংকারীরা চূড়ান্তভাবেই বিফল। মনের কোণে ঠাঁই নেওয়া সুপ্ত অহংকার দূর করতে না পারলে সকল পুণ্যের কাজই বৃথা। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত অহংকার দূর করার চর্চা করা। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত তাবেয়ি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা (রহ) একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) মাথায় এক বোঝা খড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে বলা হলো- আপনি কেন এ কাজ করছেন? আল্লাহ তো আপনাকে সচ্ছলতা দিয়েছেন, এমন না করলেও আপনার চলে। তিনি বলেন, অন্তরের অহংকার ও অহংকারবোধকে আহত করতে চাই। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (হায়সামি, মুসতাদরাকে হাকেম)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অহংকারমুক্ত জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর