মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অন্তরের ইবাদতগুলো কী, কেন জরুরি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২২, ০৩:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

অন্তরের ইবাদতগুলো কী, কেন জরুরি?

ইবাদতের মধ্যে কিছু আছে শরীরভিত্তিক, যেমন—নামাজ ও রোজা। কিছু আছে আর্থিক, যেমন—হজ, জাকাত, কোরবানি ইত্যাদি। আবার কিছু ইবাদত এমন, যেগুলো অন্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেগুলোর মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে হয়। এতে অন্যান্য ইবাদত আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়। তাই একজন মুমিনের জন্য অন্তরের ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জেনে রেখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই ঠিক হয়ে যায়। আর যখন তা খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীর খারাপ হয়ে যায়। জেনে রেখো, ওই গোশতের টুকরা হলো কলব (অন্তর)।’ (বুখারি: ৫২)


বিজ্ঞাপন


আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের শরীর ও অবয়বের দিকে তাকান না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে লক্ষ করেন।’ (মুসলিম: ৬৪৩৬)

বুঝাই যাচ্ছে অন্তরের পরিশুদ্ধতা ছাড়া সবকিছুই অর্থহীন। তিন বিষয়ের সমষ্টিকে ঈমান বলে; ওখানে প্রথম বিষয়টিই হচ্ছে আন্তরিক বিশ্বাস। (পরবর্তী বিষয়গুলো মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল।) আর ঈমান ছাড়া কোনো ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, ‘তাদের সমস্ত আমল নিয়ে আমি ধুলোর মতো উড়িয়ে দেব।’ (সুরা ফুরকান: ২৩)

ঈমানের পর বান্দার অন্যতম অন্তরের ইবাদত হলো, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা স্থাপন করা। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তরে আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ভালোবাসা জন্ম নেবে না, ততক্ষণ ঈমানে পূর্ণতা আসবে না, বান্দা ইবাদতের স্বাদ পাবে না। এ কারণে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর।’ (সুরা বাকারা: ১৬৫)

আরও পড়ুন: যৌবনের ইবাদত এত দামি কেন?


বিজ্ঞাপন


অন্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহর ভয়ে সব ধরনের গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকেও নিরাপদ হয়ে গেছে? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া কেউ আল্লাহর কৌশলকে নিরাপদ মনে করে না। (সুরা আরাফ: ৯৯)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তো শয়তান। সে তোমাদের তার বন্ধুদের ভয় দেখায়। তোমরা তাদের ভয় করো না; বরং আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৭৫)

রাসুল (স.)-এর ভাষ্যমতে, কেয়ামতের দিনে যে সাত শ্রেণির মানুষ আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে তাদের অন্যতম হলো- যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু বের হয়ে পড়ে।’ (বুখারি: ১৪২৩)

আল্লাহর রহমতের আশা করা অন্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া পথভ্রষ্টতার লক্ষণ। আর ‘তিনি (আল্লাহ) বলেন, যারা পথভ্রষ্ট, তারা ছাড়া আর কে তার রবের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ (সুরা হিজর: ৫৬)

তাই গুনাহ হয়ে গেলে আল্লাহর রহমতের আশা নিয়ে তাওবা করে আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসতে হয়। আশা করা যায়, আল্লাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(ইয়াকুব আ. বললেন) হে আমার পুত্ররা, তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহোদরের অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহর রহমত থেকে তোমরা নিরাশ হয়ো না। কারণ অবিশ্বাসী সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর রহমত থেকে কেউ নিরাশ হয় না। (সুরা ইউসুফ: ৮৭)

আরও পড়ুন: এক পরিশ্রমহীন ইবাদত ‘নীরবতা’

অন্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো ইখলাস। যা ছাড়া সকল ইবাদতই প্রাণহীন। পবিত্র কোরআনে ইখলাসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের এ ছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।’ (সুরা বাইয়্যিনাহ: ৫)

রাসুল (স.)-কে ভালোবাসা অন্তরের অন্যতম ইবাদত। যা প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার প্রথম শর্ত। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে বেশি প্রিয় হওয়া। দুই. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। তিন. কুফরিতে ফিরে যাওয়া আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা।’ (বুখারি: ৬০৪১)

অন্তরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা। এর প্রতিদানস্বরূপ মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন বিশেষ সংবর্ধনা দেবেন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা নবী নন এবং শহীদও নন। কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে তাঁদের মর্যাদার কারণে নবীরা ও শহীদরা তাঁদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের অবহিত করুন, তাঁরা কারা? তিনি বলেন, তাঁরা ওই সব মানুষ, যাঁরা আল্লাহর মহানুভবতায় পরস্পরকে ভালোবাসেন, অথচ তাঁরা পরস্পর আত্মীয়ও নন এবং পরস্পরকে সম্পদও দেননি। আল্লাহর শপথ! তাঁদের মুখমণ্ডল যেন নূর এবং তাঁরা নূরের আসনে উপবেশন করবেন। তাঁরা ভীত হবেন না, যখন মানুষ ভীত থাকবে। তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়বেন না, যখন মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না।’ (সুরা ইউনুস: ৬২) (আবু দাউদ: ৩৫২৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর অন্তর পরিশুদ্ধ করুন। অন্তরের ইবাদতগুলো যথাযথ সম্পন্ন করার তাওফিক দান করুন। পাশাপাশি সব ইবাদত কবুল করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর