রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

যৌবনের ইবাদত এত দামি কেন?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:২৭ এএম

শেয়ার করুন:

যৌবনের ইবাদত এত দামি কেন?

যৌবনকাল বড় নেয়ামত। যৌবনে দেহ ও মন দুটোই শক্তিশালী, টগবগে ও চাঙ্গা থাকে। এ কারণে দীনি দায়িত্ব পালন করা, ইবাদত বন্দেগি করা সহজ। যৌবনের আরেকটি দিক হলো- এ সময় কামনা-বাসনা, উদ্যম ও প্রবাহ থাকে। শয়তানের কুমন্ত্রণায় বেশি পতিত হন একজন যুবক। এ অবস্থায় নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করা কঠিন। তা সত্ত্বেও যারা আল্লাহর জন্য দায়িত্ব পালন করে, গভীর রাতে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে, সেই আমলের মূল্য আল্লাহর কাছে স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি হয়। রাসুল (স.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ...যে যুবক বেড়ে উঠেছে মহান প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে।’ (বুখারি: ৬৬০)

বৃদ্ধ বয়সে মসজিদে পড়ে থাকলেও তার ইবাদত কবুলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। কিন্তু যুবক বয়সে মসজিদে গেলেই রয়েছে পুরস্কারের ঘোষণা। আল্লাহ বেশি খুশি হন যারা যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন। একজন যুবক যতটা শুদ্ধতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে আমল করতে পারে, বৃদ্ধ হয়ে গেলে তা সম্ভব হয় না। তাই এই মহামূল্যবান নেয়ামত কোনোভাবেই অবহেলায় কাটানো উচিত নয়। এ কারণেই কেয়ামতের দিন যৌবনকালের সময়ের হিসাব নেওয়া হবে। প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ব্যতীত মানুষকে এক কদম নড়তে দেওয়া হবে না; তার মধ্যে একটি হলো- সে তার যৌবনকাল কোন কাজে ব্যয় করেছে।’ (তিরমিজি: ২৪১৬)


বিজ্ঞাপন


অন্য হাদিসে পাঁচটি অবস্থার পূর্বে পাঁচটি অবস্থাকে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো- ‘তোমরা বার্ধক্যের আগে যৌবনকে মর্যাদা দাও।’ (বায়হাকি: ১০২৪৮)

মানুষের জীবনের সূচনা থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত যে অবস্থার রূপান্তর ঘটে তাতে যৌবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যুগে যুগে সব পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুবকরাই দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেক জাতির ইতিহাসেই দেখা যায়, তাদের মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যুবকরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তেমনই এক যুবক ছিলেন ইবরাহিম (আ.), যিনি সর্বপ্রথম নিজ গোত্রের মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি, এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম।’ (সুরা ইবরাহিম: ৬০)

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপযুক্ত সময়ে বিশেষ বিশেষ নিয়ামত দান করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর মুসা যখন যৌবনে পদার্পণ করল এবং পরিণত বয়স্ক হলো, তখন আমি তাকে বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান দান করলাম। আর এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকি।’ (সুরা কাসাস: ১৪)

আসহাবে কাহাফের সাত ব্যক্তিও ছিলেন যুবক। যারা এক আল্লাহর ইবাদতে বিশ্বাসী ছিলেন। যাদেরকে শত্রুর হাত থেকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, যখন যুবকেরা পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করে তখন দোয়া করে, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের কাজকে সঠিকভাবে পরিচালনা করুন।’ (সুরা কাহাফ: ১০)


বিজ্ঞাপন


যৌবনের শক্তিমত্তাকে যে ভালোর দিকে নেয়, সে হয় উত্তম চরিত্রের অধিকারী, ন্যায়, নীতি ও আদর্শের বলে বলীয়ান। অন্যদিকে যে মন্দের দিকে নেয়, সে হয় মন্দ চরিত্রের অধিকারী, ঘৃণিত, নিন্দিত ও জঘন্য ব্যক্তি। আল্লাহ মানুষকে এ উভয় শক্তি দিয়েছেন। এ সময়ে যে যত ভালো কাজ করতে পারবে, আমলনামা তত ভারী হবে। আল্লাহ বলেন, ‘..তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা কাহাফ: ১৩)

যুবকদের প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়া অফুরন্ত। আল্লাহ তাদের হতাশাগ্রস্ত হতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার: ৫৩)

আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে যত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন সবাইকে যৌবন বয়সেই নবুয়ত দিয়েছেন। যৌবনের উদ্যম ও শক্তিমত্তার সঙ্গে তারা ছড়িয়ে দিয়েছেন দীনের দাওয়াত। যুবকরাই পারে একটি সমাজ, রাষ্ট্র বা দেশের পরিবর্তন ঘটাতে। প্রত্যেক যুবকের উচিত তার যৌবনকে পাপমুক্ত রেখে আল্লাহর ইবাদতে রঙিন করা। সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি, জিনা-ব্যভিচারসহ সব গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যৌবনের তৎপর্য উপলব্ধি করার এবং বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর