রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করা জান্নাতিদের গুণ 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২২, ১১:৪৮ এএম

শেয়ার করুন:

গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করা জান্নাতিদের গুণ 

পরকালীন সফলতাই হচ্ছে বান্দার চিরস্থায়ী সফলতা। একজন প্রকৃত মুমিন সেই সাফল্যের দিকেই ছোটেন। মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য থাকেন পাগলপারা। গুনাহ হয়ে গেলে তার মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। তাওবা-ইস্তেগফার না করা পর্যন্ত তিনি কিছুতেই শান্তি পান না। এটি মূলত জান্নাতি মানুষের গুণ। আল্লাহ তাআলা বিষয়টি পবিত্র কোরআনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এভাবে—

‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দেবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' (সুরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬)


বিজ্ঞাপন


আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব মানুষের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে। এরাই তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলো; সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরা তারাই, যাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।’ (সুরা নিসা: ১৭-১৮)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে জান্নাত ওয়াজিব

তাই তাওবা করতে দেরি করা মুমিনদের জন্য শোভনীয় নয়। যারা গুনাহ করার পর তাওবা করতে দেরি করে তাদের অন্তরে দাগ পড়ে যায়। এভাবে কালো দাগে অন্তর ঢেকে যায়। তখন গুনাহকে গুনাহ মনে হয় না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহের কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে তখন তার অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তাআলা যা বর্ণনা করেছেন- ‘কখনই না, বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে’ (সুরা মুতাফফিফিন: ১৪) (তিরমিজি: ৩৩৩৪; ইবনে মাজাহ: ৪২৪৪; মেশকাত: ২৩৪২; সহিহুল জামে: ১৬৭০)

আর যাদের অন্তর কঠিন ও আল্লাহর ভয়শূন্য, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা হুঁশিয়ারি করেন, ‘দুর্ভোগ ওই লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।’ (সুরা জুমার: ২২)


বিজ্ঞাপন


অতীত পাপকাজে অনুশোচিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে ওই পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা করার নামই তাওবা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো- বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম: ৮)

আরও পড়ুন: কোনো হিসাব ছাড়াই জান্নাতে যাবেন যারা

অতএব গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করা মুমিন হিসেবে জরুরি বিষয়। আমরা অনেকে মনে করি, আমরা পাপের সাগরে ডুবে গেছি, আল্লাহ আমাদের হয়তো ক্ষমা করবেন না; এগুলো ভুল ধারণা। তিনি দয়ার সাগর। বান্দার এক বিন্দু অনুশোচনার অশ্রু তিনি সহ্য করতে পারেন না। তাই এক ফোঁটা অশ্রু দিয়েই তিনি বান্দার জীবনের সকল গুনাহ ধুয়ে সাফ করে দেন। এমনকি জাহান্নামকেও চিরতরে হারাম করে দেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে লোক কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার ওলানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (আল্লাহ তাআলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। (তিরমিজি: ১৬৩৩)

আরও পড়ুন: যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, তাদের সম্পর্কে নবীজি যা বলেছেন

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হও, আল্লাহ তাআলা তার বান্দার তাওবাতে এরচেয়েও বেশি খুশি হন।’ (বুখারি: ৬৭০৯)

সুতরাং, যখনই কোনো গুনাহ হয়ে যায়, অবিলম্বে তাওবা করতে হবে। ‘আল্লাহ অবশ্যই তাদের তাওবা কবুল করবেন, যারা না জেনে মন্দ কাজ করে, তারপর অচিরেই তাওবা করে। এদের তাওবাই আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা: ১৭)

তাই আসুন, কৃত গুনাহের জন্য দ্রুত তাওবা করে নিজেকে পবিত্র করি। আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে নিজেকে মুক্ত করি। জাহান্নামের পথ ছেড়ে জান্নাতের পথে চলি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর