শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জান্নাতি মানুষ দুনিয়াতে দুর্বল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০২২, ০৮:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

জান্নাতি মানুষ দুনিয়াতে দুর্বল

পরকালীন সফলতাই হচ্ছে বান্দার চিরস্থায়ী সফলতা। একজন প্রকৃত মুমিন সেই সাফল্যের দিকেই ছোটেন। দুনিয়ার মোহ, ক্ষমতা তার মধ্যে কাজ করে না। সর্বক্ষমতাধর মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য থাকেন পাগলপারা। তাই স্বভাবতই তিনি দুনিয়ায় তুলনামূলক দুর্বল থাকেন।

হারিসা ইবনে ওয়াহাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি—


বিজ্ঞাপন


“আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা হবে দুনিয়াতে দুর্বল, মাজলুম। তারা যদি কোন কথায় আল্লাহর ওপর কসম করে ফেলে, তবে আল্লাহ তাআলা তা পূর্ণ করে দেন। আর যারা জাহান্নামে যাবে তারা হবে অবাধ্য, ঝগড়াটে ও অহংকারী। (বুখারি: ৬২০২)

আল্লাহ তাআলা ওসব জান্নাতিদের মহৎ এক গুণের প্রশংসা করেন। সেটি হচ্ছে, তারা ভুল করলে দ্রুত তওবা করেন। গুনাহের ওপর অটল থাকেন না। কোরআনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এভাবে—

‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা (এর দ্বারা) নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে (তাদের) গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দিবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' (সুরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬)

ওসব দুর্বল মানুষ দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করার গুণে গুণান্বিত থাকবে। তারা মহান মালিকের সন্তুষ্টি ও পরকালীণ আকর্ষণকেই অগ্রাধিকার দেবেন সব বিষয়ে, সব কিছুতে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন—


বিজ্ঞাপন


‘নারী জাতির প্রতি, সন্তান-সন্ততির প্রতি ভালোবাসা, কাঁড়ি কাঁড়ি সোনা-রূপা, পছন্দসই ঘোড়া, গৃহপালিত জন্তু ও জমিনের ফসল (সব সময়ই) মানুষের জন্যে লোভনীয় করে রাখা হয়েছে। (আসলে) এ সব হচ্ছে পার্থিব জীবনের কিছু ভোগের সামগ্রী মাত্র। (স্থায়ী জীবনের) উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছেই। হে নবী! আপনি (তাদের) বলুন, আমি কি তোমদের এগুলোর চাইতে উৎকৃষ্ট কোনো বস্তুর কথা বলবো? (হ্যাঁ, সেই উৎকৃষ্ট বস্তু হচ্ছে তাদের জন্যে) যারা আল্লাহকে ভয় করে, এমন সব লোকদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে রয়েছে (মনোরম) জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে প্রবহমান থাকবে (অগণিত) ঝর্ণাধারা এবং তারা সেখানে অনাদিকাল থাকবে, আরো থাকবে (তাদের) পুত-পবিত্র সঙ্গী ও সঙ্গিনীরা। সর্বোপরি থাকবে আল্লাহ তাআলার (অনাবিল) সন্তুষ্টি; আল্লাহ নিজ বান্দাদের (কার্যকলাপের) ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা আল ইমরান: ১৪-১৫)

মূলত দুনিয়াবি জীবনে ওসব মুমিনরাই নেককার। আর নেককারদের জন্যই জান্নাত। `যারাই আল্লাহ তাআলার ওপর ঈমান আনবে এবং নেককাজ করবে, তারা বেহেশতবাসী হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে।’ (সুরা বাকারা: ৮২)

কোরআন ও হাদিসে জান্নাতের বর্ণনা, জান্নাতবাসীদের জীবনাচারসহ বিশদ আলোচনা করার কারণ হলো, মানুষ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের ধন-সম্পদ, চাকচিক্য, আরাম-আয়েশের পেছনে না ছুটে চিরস্থায়ী জান্নাতের প্রতি মোহ তৈরি করবে। ইসলামি বিধান অনুযায়ী, জীবন পরিচালনার মাধ্যমে আখেরাতের সাফল্যলাভে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন। জান্নাতিদের সঙ্গী হিসেবে কবুল করুন। প্রকৃত মুমিনের গুণে গুণান্বিত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর