নারী মায়ের জাতি। ইসলাম নারীকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। বসিয়েছে সম্মানের আসনে। হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে, সন্তানের জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে। একজন সভ্য ও শিক্ষিত মায়ের দীক্ষায় সুপথের দিশা পায় পুরো পরিবার, পুরো জাতি। সভ্যতার অন্যতম পরিচায়ক হচ্ছে শালীনতা। অশালীন জীবনাচার সাময়িক; কোনো সমাজেই এর চূড়ান্ত গ্রহণযোগ্যতা নেই।
পোশাক-পরিচ্ছদ শুধু লজ্জা নিবারনের জন্যে নয়, ব্যক্তিত্ব, শালীনতাবোধ এবং সামাজিক অবস্থান অনেকটাই নির্ভর করে পোশাকের ওপর। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাস থেকেই তা জানা যায়। মানুষ একসময় বন্যপশুর মতোই দিগম্বর ছিলেন। লজ্জা-শরমের বিষয়টি অনুভূত হওয়ায় আদিম মানুষেরা গাছের লতাপাতা, ছাল-বাকল, পশুপাখির চামড়া ও পালক পরিধান করে লজ্জা নিবারণ করতে শুরু করে। সভ্যতার অগ্রযাত্রা তখন থেকেই শুরু।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু বর্তমান সমাজে ফ্যাশন নাম দিয়ে শুরু হয়েছে অর্ধ-উলঙ্গ ও অধিক মুনাফা হাতানোর ব্যবসা। বণিক-শ্রেণির সর্বগ্রাসী লোভের সবচেয়ে নির্মম শিকার নারীসমাজ। নারীদেরকে কত সূক্ষ্মভাবে যে প্রতারিত করা হচ্ছে হতভাগা নারী তা আঁচই করতে পারছে না। অথচ অশালীনতা সব দিক থেকে অকল্যাণকর। যে পোশাক শালীনতার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ, তা যেন শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়!
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ (সুরা আরাফ: ২৬)
আরও পড়ুন: ‘পুরুষের মতো হতে চাওয়া নারীত্বের অপমান’
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের আবরণ প্রদর্শন না করে।’ (সুরা নুর: ৩১)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘হে নবী, স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব: ৫৯)
বিষয়টি সবাইকে ভেবে দেখতে হবে। যে পোশাক আদিম মানুষকে সভ্যতায় উন্নীত করেছে, আধুনিক ফ্যাশনের নামে তার ডিজাইন যদি আদিমতাকেই উসকে দেয় তা কোনোভাবে রুচিশীল, মার্জিত পোশাক বলে বিবেচিত হতে পারে না। মনে রাখতে হবে পোশাক শুধু জীবনে নয়, মরণেও থাকবে। নবী কারিম (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইকে কাফন দেবে, সে যেন ভালো কাপড় দিয়ে কাফনের ব্যবস্থা করে। (মুসলিম: ২০৭৪)
মডেল এবং টিভি সিরিয়ালে দেখা অর্ধশরীর আবৃত করার মতো নারীদের বাহারি পোশাক বাজারজাত করে পোশাক কোম্পানিগুলো। উঠতি ছেলেমেয়েদের এসব পোশাকের প্রতি থাকে বাড়তি আগ্রহ। অথচ রাসুলুল্লাহ (স.) এসব পোশাক না পরার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে।’ (আবু দাউদ: ৪০২৯)
ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী, নারী-পুরুষের পোশাক স্বতন্ত্র। রাসুল (স.) অভিসম্পাত করেছেন ওই পুরুষকে যে নারীর পোশাক পরে এবং ওই নারীকে যে পুরুষের পোশাক পরে। (আবু দাউদ: ৪০৯৮)
ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অনন্য উপকরণ পোশাক। তবে, অহংকার বা মানুষ দেখানোর মানসিকতা সর্বাবস্থায় সব কাজেই নিন্দনীয়। এক হাদিসে নবী কারিম (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না (রাগান্বিত থাকবেন)। (বুখারি: ৫৭৯১)
বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নাজায়েজ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অমুসলিমদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (তাবারানি আওসাত: ৩৯২১)
ইসলামের দৃষ্টিতে শরীর ও শরীরের অবয়ব প্রকাশ পায়—এমন পাতলা কাপড় পরিধান করাও নিষেধ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ, যে নিজেও পথভ্রষ্ট এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ পাঁচ শ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়।’ (মুয়াত্তা মালিক: ১৬৬১)
ইসলাম নারীদের সুন্দর, রুচিশীল ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করতে বলে। অর্ধ উলঙ্গ কখনো সুন্দর ও শালীনতার বাহন নয়। বরং পোশাকের সৌন্দর্য বাড়াতে কারুকাজ ও নকশা দিতে উৎসাহিত করে ইসলাম। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মেয়ে উম্মে কুলসুমের গায়ে হালকা নকশা করা রেশমি চাদর দেখেছেন।’ (সহিহ বুখারি: ৫৮৪২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শালীন, সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

