সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

ইসলাম জাত-বর্ণের পার্থক্য করে না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২২, ০৮:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

ইসলাম জাত-বর্ণের পার্থক্য করে না

ইসলামে বংশ-মর্যাদা ও বর্ণ ভেদাভেদ নেই। যেখানে নাগরিক-সৈনিক, রাজা-প্রজা সবাই সমান। কোরআন ও সুন্নাহয় গোত্র প্রাধান্য ও বর্ণবাদিতাকে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামি খেলাফতের দায়িত্বশীল বণ্টনই এর অন্যতম উদারহরণ। যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি এবং বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, যে সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সব কিছুর খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত: ১৩)

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা সকল মানবকে সমানভাবে উল্লেখ করেছেন। চাই কালো হোক, সাদা হোক কিংবা অন্য কোন বর্ণের হোক এতে কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য হবে শুধু তাকওয়া বা আল্লাহভীতির ভিত্তিতে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: তাকওয়া অর্জনের ৭ উপায়

মূলত বর্ণের ভিন্নতা কিংবা ভাষাগত বিভাজন হচ্ছে মহান আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য।’ (সুরা রুম: ২২)

রাসুলুল্লাহ (স.) মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করে প্রথমেই বংশ দ্বন্দ্বের অবসান করেছিলেন। ‘আউস ও খাজরাজ’-এর গোত্র দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘ দিনের। হাবশি ক্রীতদাস বেলাল (রা.) ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন ছিলেন। জান্নাতে নবীজি যার জুতার আওয়াজ পেয়েছিলেন তিনি আরও কেউ নন, এই কালো বর্ণের বেলাল। (সূত্র: (মেশকাত: ১৩২২, সহিহ বুখারি: ১১৪৯, মুসলিম: ২৪৫৮, সহিহ আত তারগিব: ২২৬, আহমদ: ৮৪০৩, ইবনু খুযায়মাহ: ১২০৮)

পড়ুন: জান্নাতে নবীজির আগে বেলালের পায়ের শব্দ, রহস্য কী?


বিজ্ঞাপন


হজরত উসামাহ ইবনু জায়েদ (রা.) পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রধান সেনাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অথচ তখনও হজরত আবু বকর, ওমর ও আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর মতো প্রসিদ্ধ সাহাবিরা জীবিত ছিলেন। এসব সাহাবিদের দ্বিধাহীন নেতৃত্ব ও আনুগত্য মেনে নিয়েছিলেন উচ্চ বংশ মর্যাদা ও নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘হে মানবজাতি! সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের রব একজন, তোমাদের পিতাও একজন। সতর্ক হও! কোনো আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোনো অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো কালোর ওপর সাদার কিংবা সাদার ওপর কালোর তাকওয়া ব্যতীত কোনো মর্যাদা নেই।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৮৯)

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যয়ের সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোনো জাতির প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের কোনোভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ করো, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তোমরা যা করো; আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা মায়েদা: ৮)

সকল বিভেদ ভুলে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান করে মহান প্রভু বলেন, ‘বলুন, হে কিতাবধারীগণ! এসো একটি বাণীর দিকে যেটি আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান। আমরা যেন একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি এবং তার সাথে কাউকে শরিক না করি। আর আমাদের একজন অন্যজনকে রব হিসাবে গ্রহণ করি না। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলো তোমরা সাক্ষী থাকো আমরা হচ্ছি মুসলিম।’ (সুরা আলে ইমরান: ৬৪)

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ পাক কিতাবধারীদেরসহ সকল মানব জাতিকে একমাত্র তার ইবাদতের দিকে আহবান করেছেন। অতএব সকল মানবজাতির উচিত- তারা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। আর একমাত্র আল্লাহকেই প্রভু হিসাবে মানবে।

আধুনিকতার এ সময়ে বর্ণবাদ একটি অন্যতম সমস্যা। এ বৈষম্য ও বর্ণবাদ দূরীকরণের ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও বিশ্ব থেকে এখনো বৈষম্য ও বর্ণবাদের অবসান হয়নি। এমনকি এই বর্ণবাদের কারণেই বিশ্বব্যাপী এখনও অনেক মানুষকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বোঝার তাওফিক দান করুন। সকল বিভেদ সম্পূর্ণ ভুলে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর