সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কেবলার দিকে পা দিয়ে শোয়া কি হারাম?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২২, ০১:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

কেবলার দিকে পা দিয়ে শোয়া কি হারাম?

পবিত্র কাবাঘর আল্লাহ তাআলার অন্যতম নিদর্শন। এ ঘরটিকে মহান আল্লাহ সবার জন্য নিরাপত্তার স্থান হিসেবেও নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাতে বহু সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে, (যেমন) মাকামে ইবরাহিম। যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে, সে নিরাপত্তা লাভ করে। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার (পক্ষে) অবশ্য কর্তব্য। আর যে অস্বীকার করবে (সে জেনে রাখুক যে), আল্লাহ জগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী।’ (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)

কাবার দিকে পা রাখা জায়েজ বা নাজায়েজ হওয়া নির্ভর করবে—সম্মান প্রদর্শন করা বা না করার ওপর। অসম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পবিত্র কাবার দিকে পা রাখা নাজায়েজ। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—فَإِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْغَائِطَ، فَلَا يَسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ، وَلَا يَسْتَدْبِرْهَا ‘তোমাদের কেউ পায়খানায় গেলে কেবলামুখী হয়ে বসবে না এবং কেবলার দিকে পিঠ দিয়েও বসবে না। (মুসলিম, পবিত্রতা অধ্যায়)


বিজ্ঞাপন


এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, কাবা শরিফের অসম্মান হয়; এমন কাজ শরিয়ত পছন্দ করে না। এ কারণে ফকিহগণ কাবার দিকে পা দিয়ে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন। হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ফতোয়ায়ে আলমগিরিতে আছে—وَيُكْرَهُ مَدُّ الرِّجْلَيْنِ إلَى الْكَعْبَةِ فِي النَّوْمِ وَغَيْرِهِ عَمْدًا ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা অন্য কোনো অবস্থায় কাবা শরিফের দিকে পা দেওয়া মাকরুহ। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ৫/৩১৯, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৯/১৭৪)

আরও পড়ুন: অবৈধ সম্পর্ক থাকাবস্থায় ইবাদত কবুল হবে?

স্মরণ রাখতে হবে যে, কোনো বিষয় ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম সাব্যস্ত হবে না যতক্ষণ না হারাম হওয়ার অকাট্য দলিল পাওয়া যাবে। পশ্চিম দিকে পা রাখা হারাম মর্মে কোরআন-হাদিসে কোনো অকাট্য দলিল পাওয়া যায় না। যে জন্য পশ্চিম দিকে পা রাখাকে ঢালাওভাবে হারাম বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া অক্ষম ব্যক্তির নামাজের পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে ফুকাহায়ে কেরাম বলে থাকেন, ‘যদি কোনো অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বা বসে নামাজ পড়তে না পারেন, তাহলে কেবলা মুখ করে এক পাশে শুয়ে নামাজ আদায় করবেন। যদি সেটাও না পারেন তাহলে চিত হয়ে শুয়ে কেবলার দিকে পা দিয়ে নামাজ পড়বেন।’ পশ্চিম দিকে পা রাখা যদি সর্বাবস্থায় হারাম বা নাজায়েজ হতো— তাহলে সালাত আদায়ের সময়ও তা হারাম হতো। 

কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সবার জন্য জরুরি। যদি কেউ অসম্মানের উদ্দেশ্যে কাবার দিকে পা দিয়ে শয়ন করে, সেটা কুফুরি কাজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলো প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল, তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতিপ্রসূত। (সুরা হজ: ৩২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ‘হাদিয়া’ নিয়ে জাহান্নামে যাচ্ছেন না তো?

ইমাম জারকানি মুয়াত্তা মালিকের ব্যখ্যাগ্রন্থে সহিহ ইবনে খুজাইমা ও সহিহ ইবনে হিব্বানের বরাতে নিম্নোক্ত হাদিসে মারফু উল্লেখ করেন, ‘যে ব্যক্তি কেবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে, কেয়ামতের দিন তাকে এমনভাবে উত্তোলন করা হবে যে— তার থুথু তার দুই চোখের মাঝখানে থাকবে। ইমাম জারকানি (রহ.) ইবনে হিব্বান এবং আবু দাউদ (রহ.)-এর বরাতে অন্যত্র বর্ণনা করেন, ‘এক সাহাবি নামাজের ইমামতি করার সময় সামনে তথা কেবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করলেন, যখন তিনি নামাজ থেকে অবসর হলেন, তখন তিনি বললেন- সে মূলত তোমাদের নামাজই পড়ায়নি। উক্ত হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল (স.) তাকে বলেন- নিশ্চয় তুমি আল্লাহ এবং তার রাসুলকে কষ্ট দিয়েছ। (শরহুজ জারকানি, পৃষ্ঠা-৬৬২)

কোনো সমাজে যদি কেবলার দিকে পা দেওয়াকে সবাই অসম্মানজনক মনে করে থাকেন, সেক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরামের মতে, অসম্মানের উদ্দেশ্য না থাকলেও কেবলার দিকে পা দেওয়া মাকরুহ। যেমন ফতোয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে, কাবার দিকে ইচ্ছেকৃত পা লম্বা করা মাকরুহ ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩১৯; আল মুহিতুল বুরহানি: ৮/১০)

অতএব, অসম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে পশ্চিম দিকে পা রাখা, থুথু বা কোনো কিছু নিক্ষেপ করা কুফুরি। তবে অপারগ অবস্থায় জায়েজ। অসম্মান প্রদর্শনের নিয়তে নয়— এমন হলে মাকরুহ। কেননা আমাদের সমাজে তা অসম্মান হিসেবে গণ্য করা হয়। অনিচ্ছাকৃত বা অসতর্কতামূলক হলে অসুবিধা নেই। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর