রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আশুরার দিনে সুন্নাহসমর্থিত তিন আমল

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ আগস্ট ২০২২, ১২:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

আশুরার দিনে সুন্নাহসমর্থিত তিন আমল

ঐতিহাসিক অসংখ্য কালজয়ী ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা। আরবি ‘আশারা’ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। এর অর্থ দশম। মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। শুধু উম্মতে মুহাম্মদিই নয়, পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবীর অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই দিনে। ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই দিনকে ঘিরে অনেক কুসংস্কার, ভুল বিশ্বাস ও কাজের চর্চা রয়েছে মুসলিম সমাজে; যার অধিকাংশই ভিত্তিহীন। ভিত্তি রয়েছে এমন তিনটি আমল নিচে তুলে ধরা হলো—

১) রোজা রাখা
এ আমল সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আশুরা উপলক্ষে দুই দিন রোজা রাখা মোস্তাহাব। মহররমের ১০ তারিখের আগে বা পরে এক দিন বাড়িয়ে রোজা রাখার কথা হাদিস শরিফে এসেছে। ইসলামে আশুরার রোজার বিশেষ গুরুত্ব আছে। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (স.) আমাদের (রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। আর এ বিষয়ে তিনি নিয়মিত আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না, নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না।’ (মুসলিম: ১১২৮)


বিজ্ঞাপন


ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (স.) আশুরা ও রমজানের রোজা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন, অন্য কোনো রোজা সম্পর্কে তাঁকে সেরূপ গুরুত্ব প্রদান করতে দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি: ২০০৬, মুসলিম: ১১৩২)

২) পরিবারের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন
আরেকটি আমল বর্ণনা সূত্রে দুর্বল হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হলো, আশুরার দিনে যথাসাধ্য খাবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করা। যথাসম্ভব ভালো খাবার খাওয়া। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (স.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির: ১০০০৭; বায়হাকি: ৩৭৯৫)

আরও পড়ুন: ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক আশুরা 

এ হাদিসের বর্ণনা সূত্রে দুর্বলতা আছে। তবে ইবনে হিব্বানের মতে, এটি ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের হাদিস। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর দাবি, রিজিকে প্রশস্ততার ব্যাপারে কোনো হাদিস নেই। এটি ধারণাপ্রসূত। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেছেন, এটি বিশুদ্ধ হাদিস নয়। তবে এ বিষয়ে একাধিক বর্ণনা থাকার কারণে ‘হাসান’ হওয়া অস্বীকার করা যাবে না। আর ‘হাসান লিগাইরিহি’ পর্যায়ের হাদিস দ্বারা আমল করা যায়। (আস-সওয়াইকুল মুহরিকা আলা আহলির রফজি ওয়াদ দালাল ওয়াজ জানদিকা: ২/৫৩৬)


বিজ্ঞাপন


৩) নবী পরিবারের জন্য দোয়া
আরেকটি আমল যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হলো, আহলে বাইত তথা নবীর পরিবারের সদস্যরা শাহাদাতের কারণে তাঁদের জন্য দোয়া করা, দরুদ পড়া এবং তাঁদের কাছ থেকে সত্যের ওপর অটল থাকার শিক্ষা গ্রহণ করা। এই তিনটি কাজ ছাড়া আশুরায় অন্য কোনো আমল নেই।

স্মরণ রাখতে হবে, মহররম মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিভিন্ন কারণে। প্রাক-ইসলামি যুগেও মহররমের ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। আর আশুরার দিনের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে কারবালার ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি। রচিত হয়েছে শোকাভিভূত এক নতুন অধ্যায়। তবে, কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনাই আশুরার একমাত্র ও আসল প্রেরণার উৎস নয়। 

আরও পড়ুন: বড় ১০ ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, জাহেলি যুগে মক্কার কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরার রোজা রাখত এবং রাসুল (স.)-ও আশুরার রোজা রাখতেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬৩২) কাজেই আশুরার সুমহান ঐতিহ্যকে ‘কারবালা দিবসে’র ফ্রেমে বন্দি করা কখনোই উচিত নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর