সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বিসমিল্লাহ পড়ে কাজ শুরু করার বিস্ময়কর উপকার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২২, ০৫:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বিসমিল্লাহ পড়ে কাজ শুরু করার বিস্ময়কর উপকার

প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ। কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ পায়। এতে সুন্দরভাবে কাজ শেষ হয় এবং আমলনামায়ও সওয়াব লেখা হয়। বিসমিল্লাহ বলে কাজ শুরু করলে আল্লাহ ওই কাজে বরকত দান করেন। 

হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘যখন বিসমিল্লাহ নাজিল হয় তখন মেঘমালা পূর্ব দিকে দৌঁড়াতে লাগল, সাগরগুলো উত্তাল অবস্থায় ছিল, সব প্রাণী নিস্তব্ধভাবে তা শুনছিল। শয়তানকে দূরে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তখন আল্লাহ তাআলা নিজ ইজ্জত ও জালালিয়াতের কসম খেয়ে বলেছিলেন, যে জিনিসের ওপর বিসমিল্লাহ পড়া হবে, সেই জিনিসে অবশ্যই বরকত দান করব।’ (তাফসিরে তাবারি : ১/৫০)


বিজ্ঞাপন


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পবিত্র কোরআনেরই একটি স্বতন্ত্র আয়াত। সে হিসেবে বিসমিল্লাহ পড়লে প্রতি হরফের বিনিময়ে ১০টি করে নেকি তো লেখা হবেই, তাছাড়া আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম রয়েছে এই বরকতপূর্ণ আয়াতে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রিয়নবী (স.) প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলতেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে এ বাক্যটি উচ্চারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি এমন ফজিলতপূর্ণ আয়াত, যা পাঠ করার মাধ্যমে ওই কাজে বরকত ও পূর্ণতা আসে। হাদিসে এসেছে রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৪/৩২৯ ; রওজাতুল মুহাদ্দিসিন: ৬৪৫)। রাসুল (স.) আরও বলেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ (মুসলিম: ৫৩৭৬)

এছাড়াও হাদিস থেকে জানা যায়, বিসমিল্লাহর প্রভাবে শয়তান দুর্বল হয়ে পড়ে। আবু মুলাইহ একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একবার রাসুল (স.)-এর সঙ্গে তাঁর আরোহীর পেছনে বসা ছিলাম। এমন সময় আরোহী পা ফসকে পড়ে গেল। তখন আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। নবীজি (স.) বলেন, ‘শয়তান ধ্বংস হোক—এমন বলো না, কেননা এতে সে নিজেকে খুব বড় মনে করে এবং বলে—আমার নিজ শক্তিতে এ কাজ করেছি; বরং এ মুহূর্তে বলবে ‘বিসমিল্লাহ।’ এতে সে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায়, এমনকি মাছির মতো হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৯৭৮২)

‘বিসমিল্লাহ’ বলে কাজ শুরু করার সবচেয়ে বড় সুফল হলো—এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভ হয়। সব অনিষ্টতা থেকে তিনি হেফাজত করেন। প্রিয়নবী (স.)-এর কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময়ও এ উত্তম বাক্যটি পড়ানো হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জিবরাঈল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে জিবরাঈল (আ.) বলেন, হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। মুহাম্মদ (স.) বলেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) বলেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ (তাফসির ইবনে কাসির: পৃষ্ঠা-২৬৩)

তাই কল্যাণ ও পূর্ণতার জন্য মুমিনের প্রতিটি ভালো কাজের প্রারম্ভিক আমল এই বিসমিল্লাহ হওয়া উচিত। চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখার শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখা সুন্নত। কিন্তু অনেকেই বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ লিখে থাকে। এটি জায়েজ নয়। এতে বিসমিল্লাহর বরকত ও ফজিলত কিছুই পাওয়া যাবে না। এ রীতি পরিহার করা উচিত। কারো ‘বিসমিহি তাআলা’ লেখার অভ্যাস আছে। এতে আল্লাহর নাম স্মরণ করার সওয়াব পাওয়া যাবে, তবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখার  স্বতন্ত্র সুন্নত আদায় হবে না। (আহসানুল ফতোয়া: ৮/২৪, ফতোয়ায়ে উসমানি: ১/১৬৩)


বিজ্ঞাপন


লিফলেট, পোস্টার বা কোনো ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না, সেসব কাগজে ‘বিসমিল্লাহ’ না লিখে বরং শুধু মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করে নিলে এর ফজিলত ও বরকত পাওয়া যাবে। (শরহু মুসলিম নববি: ২/৯৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর