সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নফসের বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী ও পরীক্ষিত দুই হাতিয়ার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

নফসের বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী ও পরীক্ষিত দুই হাতিয়ার

প্রতিটি মুমিনের অন্তরে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আকাঙ্ক্ষা থাকে, কিন্তু নফসের প্রবৃত্তি তাকে বারবার আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে। নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে ইসলামি পরিভাষায় ‘জিহাদুন নফস’ বলা হয়, যা মুমিনের আত্মশুদ্ধির মূল সংগ্রাম। এই কঠিন যুদ্ধে জয়লাভের জন্য শরিয়ত নির্দিষ্ট কিছু আমলকে অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাবেয়ি হজরত হাসান বসরি (রহ.) এর একটি ঐতিহাসিক বাণীতে এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে দুটির বিশেষ মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে।

হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন- ‘আমার জানা মতে, রাত্রি জাগরণের কষ্ট সহ্য করে ইবাদত করা এবং সর্বশেষ সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার চেয়ে কঠিন (উত্তম) কোনো আমল আমার জানা নেই।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৩৪৯৫০; সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহাহ: ১৩২১)


বিজ্ঞাপন


১. প্রথম হাতিয়ার: রাত্রি জাগরণ (তাহাজ্জুদ)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে, তারা তাদের রবকে ডাকে ভয় ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৬)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করুন, এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় যে, আপনার রব আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৭৯)

আরও পড়ুন: গুনাহ ছেড়ে সুন্দর জীবনের ৮ রাস্তা


বিজ্ঞাপন


রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩) ‘রাতের সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো দাউদ (আ.)-এর নামাজ। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন, এক-তৃতীয়াংশ ইবাদত করতেন এবং এক-ষষ্ঠাংশ আবার ঘুমাতেন।’ (সহিহ বুখারি: ১১৩১)

ইমাম নববি (রহ.) তার ‘শারহু মুসলিম’-এ লিখেছেন- ‘তাহাজ্জুদ নামাজ মোস্তাহাব, যা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আদায় করা উত্তম, কারণ তখন আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দার দোয়া কবুল করেন।’ (শারহু মুসলিম: ৬/৩০)

২. দ্বিতীয় হাতিয়ার: আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ দান

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কখনো কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের পছন্দনীয় বস্তু থেকে (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করবে। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন।’ (সুরা ইমরান: ৯২)

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। আর যারা এ কাজ করবে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুনাফিকুন: ৯)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, আর নিচের হাত হলো ভিক্ষুকের।’ (সহিহ বুখারি: ১৪২৯) ‘প্রতিদিন সকালে দুই ফেরেশতা নেমে আসেন। একজন বলেন- হে আল্লাহ! দানকারীকে তার দানের বদলা দিন। অন্যজন বলেন- হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করুন।’ (সহিহ বুখারি: ১৪৪২)

আরও পড়ুন: যাদের দান করলে সওয়াব বেশি 

এই দুই আমলকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে কেন?

বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণ
১. নফসের দুটি প্রধান আকর্ষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: নফসের প্রধান দুই শক্তি হলো আরামপ্রিয়তা (যা তাহাজ্জুদে জয়ী হয়) এবং সম্পদের মোহ (যা দানে জয়ী হয়)।

২. গোপন ইবাদতের বিশুদ্ধতা: ইমাম গাজ্জালি (রহ.) ‘ইহইয়া উলুমিদ্দীন’-এ বলেন- ‘রাতের ইবাদত রিয়া (লোকদেখানো) থেকে অধিক মুক্ত, তাই এটি আল্লাহর দরবারে বেশি মর্যাদাপূর্ণ।’

৩. মুমিনের প্রকৃত পরীক্ষা: ফকিহদের মতে, নিজের প্রিয় বস্তু ও আরাম ত্যাগ করাই ঈমানের আসল পরীক্ষা।

হজরত হাসান বসরি (রহ.)-এর এই বাণীটি নফসের বিরুদ্ধে জিহাদের একটি পরিপূর্ণ কৌশলগত নির্দেশিকা। এই দুই আমল মুমিনকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত করে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য দান করে। ‘সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য।’ (সুরা তাওবা: ১১১)

আসুন আমরা এই দুই শক্তিশালী হাতিয়ার দিয়ে নিজেদের নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে অগ্রসর হই।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর