বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কবর জিয়ারত: পদ্ধতি, ফজিলত ও জরুরি সতর্কতা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

কবর জিয়ারত: পদ্ধতি, ফজিলত ও জরুরি সতর্কতা

কবর জিয়ারত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ আত্মশুদ্ধির আমল। এটি মুমিনকে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে উদ্বুদ্ধ করে। হাদিসে কবর জিয়ারতে উৎসাহিত করা হয়েছে, যাতে মানুষ মৃত্যুকে ভুলে না যায়, অন্তর নরম হয় এবং গুনাহ থেকে ফিরে আসে।

কবর জিয়ারতের ফজিলত

কবর জিয়ারতের মূল উদ্দেশ্য হলো মৃত্যু ও পরকালের স্মরণ গ্রহণ করা এবং মৃত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পার। কেননা কবর জিয়ারত দুনিয়া বিমুখতা সৃষ্টি করে এবং আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৫৭১)

হাদিসে আরও এসেছে- ‘যখন কেউ মৃতের জন্য দোয়া করে, আল্লাহ তাআলা তার শাস্তি লাঘব করে দেন।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২/৫০৯)

এ থেকে স্পষ্ট হয়, কবর জিয়ারত শুধু স্মরণমূলক আমল নয়; বরং এটি জীবিত ও মৃত উভয়ের জন্য কল্যাণকর।

আরও পড়ুন: নারীরা মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে পারবে?


বিজ্ঞাপন


কবর জিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি ও দোয়া

কবরস্থানে প্রবেশ করে প্রথমে শান্তভাবে সালাম ও দোয়া পড়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) এ দোয়া পড়তেন- السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার। অর্থ: ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০৫৩)

এরপর দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি বা কোরআনের যেকোনো সহজ অংশ তেলাওয়াত করে মৃতদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করা যাবে। অধিকাংশ আহলে সুন্নাহ আলেমের মতে, দোয়ার মাধ্যমে তেলাওয়াতের সওয়াব মৃতের কাছে পৌঁছায়।

কবর জিয়ারত সুন্নাহসম্মত রাখতে ৫টি জরুরি সতর্কতা

১. দোয়ার সময় কেবলামুখী হওয়া: কবর সামনে রেখে দুহাত তুলে দোয়া করা সুন্নাহসম্মত নয়। কবরকে পাশে বা পেছনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা উত্তম। চাইলে হাত না তুলে মনেও দোয়া করা যায়। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫০)

আরও পড়ুন: কবরে যাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না

২. শিরক থেকে সম্পূর্ণ সতর্ক থাকা: কবরবাসীর কাছে কোনো কিছু চাওয়া, বিপদে সাহায্য প্রার্থনা করা বা প্রয়োজন পূরণের আবেদন করা স্পষ্ট শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে এমন কাউকে ডাকে, যে কেয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট আর কে?’ (সুরা আহকাফ: ৫)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডেকে মারা যায়, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৪৪৯৭)

৩. কবরে সেজদা ও চুমু নিষিদ্ধ: কবরের মাটি স্পর্শ করে সেজদা করা, চুমু দেওয়া বা বিশেষ বরকতের বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী ও ওলিদের কবরকে সেজদাগাহ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা কবরকে সেজদার জায়গা বানাবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৩২)

৪. কবরে মানত ও দান বৈধ নয়: কবরের নামে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি বা অন্য কিছু মানত করা বৈধ নয়। কারণ মানত ও দান উভয়ই ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। মৃতের সওয়াব পৌঁছানোর উত্তম পদ্ধতি হলো জীবিত গরিব ও অসহায়দের দান-সদকা করা। (সহিহ বুখারি: ২৭৫৬; সহিহ মুসলিম: ১৬৩০)

৫. বিলাপ ও বাড়াবাড়ি পরিহার: কবরের পাশে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি, হাহুতাশ ও শোকপ্রকাশ ইসলামে নিন্দনীয়। এই আশঙ্কার কারণেই নারীদের নিয়মিত কবর জিয়ারত থেকে সতর্ক করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- ‘রাসুলুল্লাহ (স.) নারী কবর জিয়ারতকারী, কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণকারী এবং সেখানে বাতি প্রজ্বালনকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩২৩৬)

তবে আলেমদের মতে, চারটি বিষয় ঠিক থাকলে নারীরা কবর জিয়ারত করতে পারবেন। ১. ধৈর্যহারা হবে না তথা কবরস্থানে গিয়ে কান্নাকাটি, বিলাপ ইত্যাদি করতে পারবেন না, ২. পূর্ণ পর্দার সাথে বের হবেন, ৩. যাতায়াত নিরাপদ হতে হবে এবং ৪. কোনো প্রকারের ফিতনা বা গুনাহে জড়ানোর আশংকা থাকবে না। 

কবর জিয়ারত মুমিনের জন্য একটি জীবন্ত নসিহত। এটি অন্তরকে নরম করে, দুনিয়ার মোহ ভাঙে এবং আখেরাতের প্রস্তুতির দিকে ধাবিত করে। তবে এই আমল তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন তা সুন্নাহ অনুযায়ী, শিরক ও বিদআতমুক্তভাবে পালন করা হয়।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর