শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

পশু কেনার সময় যে চার বিষয় খেয়াল রাখবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০২২, ০১:৪৪ পিএম

শেয়ার করুন:

পশু কেনার সময় যে চার বিষয় খেয়াল রাখবেন

কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তিন শ্রেণির পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে। যেমন ১) ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। ২) গরু, মহিষ। ৩) উট। তাদের আবার নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে। উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হবে। (মুআত্তা মালেক: ৭৫৪)

কোরবানির যেহেতু মহান ইবাদত, তাই কোরবানির পশু কেনার সময় শরিয়ত নির্ধারিত ত্রুটিগুলোর দিকে লক্ষ রাখা জরুরি। যে চারটি বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো—


বিজ্ঞাপন


১) চোখে স্পষ্ট ত্রুটি থাকা: চোখ একেবারে কোটরের ভেতরে ঢুকে যাওয়া কিংবা বোতামের মত বের হয়ে থাকা কিংবা এমন সাদা হয়ে যাওয়া, এতে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে চোখে সমস্যা আছে। এমন পশু কোরবানির উপযোগী নয়।

২) সুস্পষ্ট রুগ্নতা: যে রোগের প্রতিক্রিয়া পশুর উপরে ফুটে উঠে। যেমন- জ্বর হওয়া যার ফলে পশু ঘুরতে বের হতে চায় না ও খাবারে তৃপ্তি পায় না। এমন চর্মরোগ যা পশুর গোশত নষ্ট করে দেয় কিংবা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। এমন পশু কোরবানি দেওয়া যাবে না।

৩) স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া: যার ফলে পশুর স্বাভাবিক হাঁটা-চলা ব্যাহত হয়। এমন পশু কোরবানির অযোগ্য।

৪) জীর্ণ-শীর্ণতা: দেখতে অসুস্থ,  জীর্ণ-শীর্ণ, রোগক্রান্ত, হাড্ডিসার - এমন পশু কোরবানির উপযোগী নয়।


বিজ্ঞাপন


বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, أَشَارَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِيَدِهِ وَيَدِي أَقْصَرُ مِنْ يَدِهِ، فَقَالَ: أَرْبَعٌ لَا يضحى بِهِنّ الْعَوْرَاءُ الْبَيِّنُ عَورُهَا، وَالْمَرِيضَةُ الْبَيِّنُ مَرَضُهَا، وَالْعَرْجَاءُ، الْبَيِّنُ ظَلَعُهَا، وَالْعَجْفَاءُ الّتِي لَا تُنْقِي ‘রাসুলুল্লাহ (স.) হাত দিয়ে ইশারা করেছেন- আমার হাত তাঁর হাত থেকে ছোট। তিনি ইশারা করে বলেছেন, চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করা যায় না। যে পশুর চোখের দৃষ্টিহীনতা স্পষ্ট, যে পশু অতি রুগ্ন, যে পশু সম্পূর্ণ খোঁড়া এবং যে পশু এত শীর্ণ যে, তার হাড়ে মগজ নেই।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৯১৯; জামে তিরমিজি: ১৪৯৭; সুনানে আবু দাউদ: ২৮০২; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১৮২)

এই চারটি মৌলিক ত্রুটি ছাড়াও এমন কিছু ত্রুটি রয়েছে যেগুলোকে এর পর্যায়ে ধরা হয়। যেমন- যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দিয়েও কোরবানি জায়েজ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২১৫, আলমগিরি: ৫/২৯৮)

যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশু কোরবানি করাও জায়েজ নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে অথবা শিং একেবারে উঠেনি, সে পশু কোরবানি করা জায়েজ। (জামে তিরমিজি: ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২১৬, রদ্দুল মুখতার: ৬/৩২৪, আলমগিরি: ৫/২৯৭)

যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা, সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি ভালো থাকে তাহলে তার কোরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। (জামে তিরমিজি: ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ: ১/৬১০, ইলাউস সুনান: ১৭/২৩৮, কাজিখান: ৩/৩৫২, আলমগিরি: ৫/২৯৭-২৯৮)

মোটকথা কোরবানির পশু সব ধরনের ত্রুটিমুক্ত ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। কেনা হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) দুটি বড় শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো বর্ণের হৃষ্টপুষ্ট খাসি দুম্বা জবাই করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৫০৪৬; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১৫৯)

আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহকে ত্রুটিমুক্ত ও উৎকৃষ্ট পশু দিয়ে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর