শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যেসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হাদিসে কঠোর সতর্কবার্তা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

যেসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হাদিসে কঠোর সতর্কবার্তা

ইসলাম কেবল ইবাদত-বন্দেগির বিধানই দেয়নি, বরং ব্যক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যবসায় ন্যায্যতা, সততা ও ভোক্তার প্রতি দায়বদ্ধতা ইসলামের মৌলিক নীতি। নবীজি (স.) কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরাসরি সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যা আজকের সময়ে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

১. প্রতারণাকারী ও মিথ্যা শপথকারী ব্যবসায়ী

হাদিসে প্রতারণা ও মিথ্যা শপথকে ব্যবসার মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। একবার রাসুলুল্লাহ (স.) এক শস্য ব্যবসায়ীর গুদামে গিয়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করলেন। পণ্যের উপরের অংশ শুকনা, কিন্তু ভিতরের অংশ ভেজা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,

এটা কী? ব্যবসায়ী বললেন, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। নবীজি (স.) বললেন, ‘ভেজা অংশ ওপরে রাখলে না কেন যাতে মানুষ দেখতে পায়? যে প্রতারণা করে, সে আমার উম্মত নয়।’ (সহিহ মুসলিম: ১০২)

মিথ্যা শপথের বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (স.) আরও সতর্ক করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদেরকে মিথ্যা শপথ থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি ব্যবসায় সাময়িকভাবে সহায়তা করলেও বরকত নষ্ট করে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬০৭)

আরও পড়ুন: ইসলামে কেমিক্যাল দিয়ে আম-কাঁঠাল পাকানোর শাস্তি


বিজ্ঞাপন


২. গুদামজাতকারী ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী

ইসলাম ব্যবসায় সামাজিক দায়বদ্ধতাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে। পণ্য আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা মারাত্মক অপরাধ। রাসুল (স.) বলেন, ‘পাপাচারী লোক ব্যতীত কেউ গুদামজাত করে না।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬০৫)

হাদিসে আরও এসেছে, ‘যে লোক মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশে চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্য-সামগ্রী গুদামজাত করে রাখবে, সে আল্লাহ থেকে সম্পর্কহীন এবং আল্লাহ তাআলাও তার থেকে দায়িত্বমুক্ত।’ (মেশকাত: ২৮৯৬)

এসব দলিল বর্তমান সময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ানো, কৃত্রিম সংকট তৈরি ও একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী নৈতিক নির্দেশনা।

৩. দোষ-ত্রুটি গোপনকারী ব্যবসায়ী

সততা ও স্বচ্ছতা ইসলামের মৌলিক নীতি। হাদিসে বলা হয়েছে- ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। কোনো মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের দোষযুক্ত পণ্য বিক্রি করা হালাল নয়, যদি সে দোষের বিষয়টি না জানায়।’ (ইবনে মাজাহ: ২২৪৬)

এই নীতি আধুনিক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণেরও ভিত্তি।

আরও পড়ুন: ব্যবসা হারাম-হালাল হওয়ার মূলনীতি

উত্তম ব্যবসায়ীর গুণাবলী

ইসলাম উত্তম ব্যবসার মডেলও উপস্থাপন করেছে। হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসুল উপার্জনের মাধ্যমগুলোর মাঝে কোন মাধ্যমটি সবচেয়ে উত্তম এবং পবিত্র? নবীজি (স.) উত্তর দিলেন, ‘নিজের হাতের কাজ এবং বিশ্বস্ততাপূর্ণ ব্যবসা।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৭২৬৫) তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর প্রতি দয়া করুন, যে ব্যক্তি বিক্রয়ের সময় সহজ-সরল, কেনার সময় সহজ-সরল এবং পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রেও সহজ-সরল আচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি: ২০৭৬)

পবিত্র কোরআন ব্যবসায়িক অসাধুতার বিরুদ্ধে সরাসরি সতর্ক করেছে- ‘ওজন পূর্ণ করবে ন্যায়সঙ্গতভাবে এবং ওজনে কম দিবে না।’ (সুরা রহমান: ৯) ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়।’ (সুরা মুতাফফিফিন: ১-৩)

আজকের দিনে ফরমালিনযুক্ত খাদ্য, ভেজাল পণ্য, ওজনে কারচুপি, কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি—এসবই হাদিসে বর্ণিত প্রতারণার আধুনিক রূপ। ইসলামে ব্যবসা কেবল মুনাফা অর্জনের মাধ্যম নয়, বরং এটি সামাজিক দায়িত্ব ও ইবাদতের সমতুল্য। নবীজি (স.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী সততা, ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করলে গড়ে উঠবে সুখী ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর