মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সন্ত্রাসীরা মুসলিম নয়, ইসলামের চূড়ান্ত বিধান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

সন্ত্রাসীরা মুসলিম নয়, ইসলামের চূড়ান্ত বিধান

ইসলামে সন্ত্রাস, বোমাবাজি, ফিতনা-ফাসাদসহ সব ধরনের প্রাণঘাতী তৎপরতার কোনো স্থান নেই। ইসলাম শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবতার ধর্ম। এর মূল শিক্ষা হলো- সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা পরিহার করে ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। মানবসমাজ থেকে ফিতনা-ফাসাদ ও জুলুম-অনাচার দূর করে ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ গঠনই ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য।

এই উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন, যারা অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে ফিরিয়ে এনেছেন সত্য, শান্তি ও ন্যায়ের আলোয়।


বিজ্ঞাপন


সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই

প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই; তাদের ধর্মই হলো রক্তপাত ও ধ্বংস। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মানে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এই কারণেই আমি বনি ইসরাইলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, কেউ যদি হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করে, তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করল।’ (সুরা মায়েদা: ৩২)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘ফিতনা (দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধ) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর পাপ।’ (সুরা বাকারা: ১৯১)

আরও পড়ুন: ইসলামে মানুষ হত্যার শাস্তি


বিজ্ঞাপন


পরকালে সন্ত্রাসীদের কঠিন শাস্তি

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভয়ংকর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হত্যার বিচার হবে।’ (বুখারি: ৬৫৩৩) তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাসকারী কোনো কাফেরকে (জিম্মি) হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের পথ দূর থেকেও পাওয়া যায়।’ (বুখারি: ৩১৬৬)

ইসলাম ন্যায়বিচারের ধর্ম

ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে।’ (সুরা নিসা: ৫৮) 

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতা কিংবা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। সে ধনী হোক বা দরিদ্র—আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর।’ (সুরা নিসা: ১৩৫)

আল্লাহ সতর্ক করেছেন- ‘কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের সুবিচার থেকে বিরত না রাখে।’ (সুরা মায়েদা: ৮)

আরও পড়ুন: কারো প্রতি অন্যায় করলে যে বিপদে পড়তে হবে

হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(রহমানের বান্দা তারাই) যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করে না এবং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না।’ (সুরা ফুরকান: ৬৮) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হলো।’ (সুরা বাকারা: ১৭৮)

রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনো মুসলমানের হত্যার চেয়ে অধিক সহনীয়।’ (নাসায়ি: ৩৯৯২) তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলমানদের) বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ৬৮৪৪)

ইসলামের অবস্থান স্পষ্ট

উপরের কোরআন-হাদিসের আলোকে স্পষ্ট যে, ইসলাম সর্বপ্রকার সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। কেউ অন্যায়ভাবে হত্যায় লিপ্ত হলে তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। আল্লাহ বলেন- ‘যে কারো প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতির প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা: ৩২)

ইসলাম মানবতা, শান্তি ও ন্যায়ের ধর্ম। সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড ও ফিতনা-ফাসাদ ইসলামের মূল চেতনার পরিপন্থী। কোনো সন্ত্রাসী কখনো মুসলিম হতে পারে না। ইসলাম ন্যায়বিচার, সংলাপ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সন্ত্রাস ও ফিতনা-ফাসাদ থেকে মুক্ত রাখুন, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর