প্রাণী মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যু সামনে উপস্থিত হতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন জায়গায় তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (সুরা লোকমান: ৩৪)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই; এমনকি যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান করো।’ (সুরা নিসা: ৭৮)
বিজ্ঞাপন
দুনিয়ার মোহে পড়ে মানুষ যখন মৃত্যুর কথা ভুলে যায়, তখন তার জীবনে নেমে আসে একের পর এক আত্মিক ক্ষতি। নিচে ৭টি মারাত্মক ক্ষতি তুলে ধরা হলো।
১️. ইবাদত থেকে গাফেল হয়ে যাওয়া
দুনিয়ার চাকচিক্য ও সম্পদের মোহ মানুষকে নামাজ, দোয়া ও আল্লাহস্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছাও।’ (সুরা তাকাসুর: ১–২)
এ আয়াত সরাসরি বলে দেয়, দুনিয়ার প্রতিযোগিতা মানুষকে মৃত্যুচেতনা ও ইবাদত থেকে বিরত রাখে।
বিজ্ঞাপন
২️. পরকালের প্রস্তুতিতে পিছিয়ে পড়া
মৃত্যু ভুলে থাকা মানুষ ভাবে- এখনো সময় আছে, পরে তওবা করব। অথচ মৃত্যু হঠাৎই এসে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন দেখে নেয়, সে আগামী দিনের (আখেরাতের) জন্য কী প্রস্তুত করে রেখেছে।’ (সুরা হাশর: ১৮)
যে মৃত্যুকে ভুলে যায়, সে এই প্রস্তুতিই নিতে পারে না।
আরও পড়ুন: সুন্দর মৃত্যুর প্রস্তুতি
৩️. মৃত্যুর পরের কঠিন বাস্তবতা ভুলে যাওয়া
মৃত্যুর পর কবর, বরজখ ও জাহান্নামের আগুন সবই বাস্তব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটি আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে।’ (সুরা হুমাজা: ৬–৭)
আরেক আয়াতে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে, তার জীবন হবে সংকীর্ণ এবং আমি কেয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠাব।’ (সুরা ত্বাহা: ১২৪)
৪️. দুনিয়ার মোহে বন্দি হয়ে পড়া
মৃত্যুচেতনা হারালে মানুষ দুনিয়ার লোভে পড়ে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে। আল্লাহ বলেন, ‘দুনিয়ার জীবন কেবল খেলা ও আমোদ-প্রমোদ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর আখেরাতই হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৪)
অতএব, মৃত্যুভয় মানুষকে আল্লাহভীত করে, আর তা হারালে সে পাপের দাসে পরিণত হয়।
৫️. মৃত্যুর সময় অনুতাপের আগুন
যারা মৃত্যুর আগে নেক আমল করে না, মৃত্যুর মুহূর্তে তারা অনুতাপ করবে- ‘হে আমার রব, আমাকে ফেরত পাঠান, যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা করিনি।’ (সুরা মুমিনুন: ৯৯–১০০)
অর্থাৎ মৃত্যু এসে গেলে অনুতাপের কোনো মূল্য থাকে না।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর পরপর মানুষের সাথে যা হয়
৬️. নেক লোকের সান্নিধ্য ও ঈমানি জাগরণ থেকে বঞ্চিত হওয়া
নেককারদের সংস্পর্শ মৃত্যুচেতনা জাগায়, ঈমান দৃঢ় করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনি নিজকে ধৈর্যের সাথে রাখবেন তাদেরই সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় ডাকে তাদের রবকে তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে।’ (সুরা কাহফ: ২৮)
যারা মৃত্যু ও আখেরাত ভুলে যায়, তারা নেক সমাজ থেকে দূরে সরে যায় এবং ঈমানি চেতনা হারায়।
৭. আখেরাতের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা থেকে বঞ্চিত হওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির: ২৮)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যারা মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২৫৯)
অতএব, মৃত্যুচেতনা হারালে মানুষ শুধু জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা সবই হারায়।
আরও পড়ুন: মৃতব্যক্তিকে কবরে সকাল-সন্ধ্যায় যা দেখানো হয়
মৃত্যুচেতনার উপকার
যারা মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করে, তারা দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত থাকে এবং নেক আমলে উৎসাহী হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা বেশি করে স্বাদ বিনাশকারী মৃত্যুকে স্মরণ করো। (তিরমিজি: ২৩০৭; ইবনে মাজাহ: ৪২৫৮)
মৃত্যুর কথা স্মরণ রাখার উপায়
কবর জিয়ারত মৃত্যুচেতনা জাগানোর অন্যতম মাধ্যম। এতে হৃদয় বিগলিত হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (ইবনে মাজাহ: ১৫৭১)
বুদ্ধিমান মুমিনরা সুখে-দুখে সবসময় মৃত্যুকে স্মরণ করেন। যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করেন, তাদের মৃত্যু হয় সুন্দর। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করার তাওফিক দান করেন এবং আখেরাতের প্রস্তুতিতে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দেন। আমিন।

