আল্লাহ তাআলা মানুষকে দিয়েছেন অগণিত নেয়ামত। এ নেয়ামতসমূহ গণনা করে শেষ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর নিয়ামত গণনা করতে চাইলে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম: ৩৪)
মানবজীবনের সর্বাধিক মূল্যবান দুই নেয়ামত হলো সময় ও সুস্বাস্থ্য। এই দুটি নেয়ামতের সঠিক মূল্যায়ন না করার কারণেই মানুষ ধোঁকায় পড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
সময় মানবজীবনের মূলধন
প্রতিটি মুহূর্তই মানুষের জন্য অপার সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে আসে। অবসর সময় সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে সামান্য প্রচেষ্টা থেকেও বড় সাফল্য অর্জন সম্ভব। কিন্তু অনেকেই সময়কে অবহেলায় কাটিয়ে দেয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজও সম্পন্ন হয় না।
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘হে আদমসন্তান, তুমি নিজেই দিনের সমষ্টি। একটি দিন অতিবাহিত হওয়া মানে তোমার একটি অংশ হারিয়ে যাওয়া।’
সময়ের সঠিক ব্যবহার না করতে পারলে মানুষ শুধু দুনিয়ায় নয়, আখেরাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার পা এক জায়গা থেকে সরবে না যতক্ষণ না সে চারটি প্রশ্নের জবাব দেবে: জীবনে কীভাবে সময় কাটিয়েছিল? যৌবনকাল কীভাবে কাটিয়েছিল? সম্পদ কোথায় উপার্জন করেছিল এবং কোথায় ব্যয় করেছিল? যে জ্ঞান অর্জন করেছিল, তা কতটুকু আমল করেছিল?’ (তিরমিজি: ২৪১৭)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: সময়ের মূল্য: কোরআন ও হাদিস কী বলে
সুস্বাস্থ্য অমূল্য সম্পদ
সুস্বাস্থ্য এমন এক নিয়ামত, যার মূল্য কেবল অসুস্থ ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারে। অসুস্থতা এলেই বোঝা যায় সুস্থতার কী অমূল্য মূল্য। তাই সময় ও স্বাস্থ্য—এই দুই নিয়ামতের প্রতি সর্বাবস্থায় সচেতন থাকা জরুরি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ এ বিষয়ে উদাসীন। ফলে পরে এসে অনুতাপ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘দুটি নেয়ামতের ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষ ধোঁকাগ্রস্ত হয়- একটি হলো সুস্থতা, অপরটি হলো অবসর সময়।’ (বুখারি: ৬৪১২)
রাসুল (স.) আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে লোক পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার কাছে সারা দিনের খোরাকি থাকে, তাহলে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াটাই একত্রিত করা হলো।’ (তিরমিজি: ২৩৪৬)
ইসলামি দৃষ্টিতে সময়ের গুরুত্ব
আল্লামা ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেন, ‘অনেক সময় মানুষ দুনিয়ার কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে আখেরাতের কোনো আমলের সময় পায় না। আবার কারও সময় থাকে, কিন্তু স্বাস্থ্য থাকে না। কেউ সময় ও স্বাস্থ্য দুটোই পায়, কিন্তু অলসতায় তা নষ্ট করে ফেলে-এই ব্যক্তিই ধোঁকাগ্রস্ত।’
(ফাতহুল বারি: ১১/১৩৪)
বস্তুত, দুনিয়া হলো আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। এখানে যে আমল করবে, তার প্রতিদান পাবে পরকালে। তাই সময় ও স্বাস্থ্যকে কাজে লাগিয়ে ইবাদতে ব্যস্ত থাকা-ই প্রকৃত বুদ্ধিমানের পরিচায়ক।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ নির্ধারিত সময়ে পালন করা জরুরি।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
অর্থাৎ, ইসলামের সকল ইবাদতের সঙ্গে সময়ের সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে তা আদায় করা যায় না।
আরও পড়ুন: সুস্বাস্থ্যের জন্য নবীজির ৬ উপদেশ
সময় পরিবর্তন আল্লাহর নিদর্শন
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ রাত ও দিন পরিবর্তন করেন; এতে দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য রয়েছে শিক্ষা।’ (সুরা নূর: ৪৪)
সময় ও যুগের এই পরিবর্তন মানুষকে মনে করিয়ে দেয়; জীবন চিরস্থায়ী নয়। মৃত্যুর পর কোনো আমলের সুযোগ থাকবে না। তাই জীবিত অবস্থায় সময় ও শক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যয় করাই মুমিনের দায়িত্ব।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি সেই মানুষকে অপছন্দ করি, যে দুনিয়ার কাজেও লিপ্ত নয়, আবার আখিরাতের কাজেও নিমগ্ন নয়।’ (হিলয়াতুল আউলিয়া: ১/১৩০)
ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ‘আমি সুফিদের সান্নিধ্যে ছিলাম। তাদের থেকে আমি দুটি কথা ছাড়া কিছুই শিখিনি। তাদের একটি কথা হলো, সময় হলো তরবারি। তুমি তাকে না কাটলে সে তোমাকে কেটে ফেলবে। আরেকটি কথা হলো, তুমি নিজেকে সত্যের কাজে ব্যস্ত না রাখলে তুমি মিথ্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। (আল-জাওয়াবুল কাফি, পৃষ্ঠা-২০৮)
অতএব, মানবজীবনে সময় ও সুস্বাস্থ্য—এই দুই নেয়ামতই সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু এ দুটির সঠিক ব্যবহার না করার কারণেই মানুষ ধোঁকা খায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সময় ও স্বাস্থ্যকে আল্লাহর ইবাদতে ও সৎকর্মে ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

