রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফেরেশতারা যেভাবে আল্লাহর ভয়ে কাঁপে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ফেরেশতারা যেভাবে আল্লাহর ভয়ে কাঁপে

ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার সম্মানিত ও অনুগত সৃষ্টি। তাঁর মহিমা, পরাক্রম ও সীমাহীন ক্ষমতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হওয়ায় তাদের হৃদয়ে এক গভীর ভয় ও শ্রদ্ধা বাস করে। এই ভয় কেবল শাস্তির আশঙ্কা নয়, বরং আল্লাহর মহানত্বের প্রতি এক অগাধ ভালোবাসা ও আত্মসমর্পণের বহিঃপ্রকাশ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ফেরেশতাদের এই ভয় ও আনুগত্যের মর্মস্পর্শী বর্ণনা আমাদের জন্য এক অনন্য শিক্ষা।

কোরআনে ফেরেশতাদের ভয়

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা বলে, ‘দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ (বরং) তিনি পবিত্র ও মহান! তারা (ফেরেশতারা) তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগ বাড়িয়ে কথা বলে না, কেবল তাঁর আদেশেই কাজ করে।’ (সুরা আম্বিয়া: ২৬–২৮)  

আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ভয় করে তাদের ওপর তাদের প্রতিপালককে এবং তাদের যা আদেশ করা হয়, তা-ই তারা করে।’ (সুরা নাহল: ৫০)  

এই আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, ফেরেশতাদের সমস্ত কর্ম ও কথন আল্লাহর নির্দেশের অধীন। তাঁর আদেশের বাইরে তারা কোনো পদক্ষেপ নেন না।

আরও পড়ুন: ১১ শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন


বিজ্ঞাপন


তাফসিরে ফেরেশতাদের ভয়ের ব্যাখ্যা

আল্লামা সাদি (রহ.) তাঁর তাফসিরে উল্লেখ করেন, ‘ফেরেশতারা আল্লাহর পরাক্রম দেখে কাঁপে, আর তাঁর সামনে বিনম্র হয়ে যায়।’ (তাফসিরে সাদি, পৃষ্ঠা ৫২২)  

ইবনে কাসির (রহ.) ব্যাখ্যা করেন, ‘তারা কখনো আল্লাহর অবাধ্য হয় না; তাঁকে ভয়ে ও শ্রদ্ধায় সর্বদা আনুগত্য করে।’

তাফসিরবিদগণের মতে, ফেরেশতাদের এই ভয় আল্লাহর মহিমা ও ভালোবাসার মিশ্রণ থেকে জন্ম নেয়, যা তাদেরকে সর্বদা আল্লাহর আনুগত্যে নিবদ্ধ রাখে।

আল্লাহর আদেশে ফেরেশতাদের প্রতিক্রিয়া

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন আল্লাহ আসমানে কোনো নির্দেশ জারি করেন, তখন ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি অতি নম্রভাবে তাদের ডানা ঝাড়তে থাকে; যেন মসৃণ পাথরের উপর শিকলের আওয়াজ। যখন তাদের মনের ভয়-ভীতি দূর হয় তারা (একে অপরকে) জিজ্ঞেস করে, তোমাদের প্রতিপালক কী বলেছেন? তারা বলেন, তিনি যা বলেছেন, সত্যই বলেছেন। তিনি মহান উচ্চ।’ (সহিহ বুখারি: ৪৮০০)  

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যখন কোনো আদেশ দেন তখন আরাশ বহনকারী ফেরেশতাগণ তাসবিহ পাঠ করতে থাকে। তাদের তাসবিহ শুনে তাদের নিকটবর্তী আকাশের ফেরেশতাগণও তাসবিহ পাঠ করে। অতঃপর তাদের তাসবিহ শুনে তাদের নিচের আকাশের ফেরেশতাগণ তসবিহ পাঠ করে। এভাবে দুনিয়ার আকাশ তথা সর্বনিম্ন আকাশের ফেরেশতাগণও তাসবিহ পাঠে আত্মনিয়োগ করে ফেলে। (মুসলিম: ২২২৯)

আরও পড়ুন: ডানার সাহায্যে ফেরেশতারা যেসব কাজ করেন

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় দূর হয়, তখন তারা বলে, ‘তোমাদের প্রতিপালক কী বললেন?’ তারা উত্তর দেয়, ‘তিনি সত্য বলেছেন।’ (সুরা সাবা: ২৩)  

এই বর্ণনাগুলো থেকে স্পষ্ট যে, আল্লাহর আদেশ ফেরেশতাদের হৃদয়ে এমন এক কম্পনের সৃষ্টি করে যে, ভয় দূর না হওয়া পর্যন্ত তারা পরস্পরের সঙ্গে কথাও বলে না।

শিক্ষণীয় বার্তা

ফেরেশতাদের জীবন মুমিনদের জন্য এক গভীর শিক্ষা নিয়ে আসে। যেমন-

  • তারা আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করে যে ভয় অনুভব করে, তা আমাদের ঈমানকে পরিশুদ্ধ ও দৃঢ় করে।
  • তাদের নিঃশর্ত আনুগত্য আমাদেরকে ফরজ ইবাদত ও দায়িত্বে অবিচল থাকার প্রেরণা দেয়।
  • তাদের দায়িত্বে নিখুঁততা আমাদের কর্মজীবন ও সামাজিক দায়িত্বে সচেতন হতে শেখায়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি দেখবেন ফেরেশতারা আরশের চারপাশে আল্লাহর প্রশংসায় তাসবিহ করছে। আর বলা হবে- ‘সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।’ (সুরা জুমার: ৭৫)  

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর