ইসলামি দৃষ্টিকোণে ইমামের দায়িত্ব কেবল নামাজ পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি মুসলিম সমাজের নেতা, দ্বীনি শিক্ষাদানকারী ও নৈতিকতার দিশারী। তাই এর বিনিময়ে ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়া তার মৌলিক অধিকার।
শরিয়তের দৃষ্টিতে ইমামের বেতন
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- ‘কর্মীকে তার ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ: ২৪৪৩)
মসজিদে পর্যাপ্ত তহবিল থাকা সত্ত্বেও ইমামকে ন্যায্য বেতন না দেওয়া জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। তহবিল সীমিত হলে ও পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে তা অবিচার হবে না; তবে তখন মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির জরুরি দায়িত্ব হবে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ইমামের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা।
ইমামতি করে বেতন গ্রহণ: শরয়ি বিধান
ক. রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন
ইসলামি আইনবিদরা একমত যে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিবদের বেতন গ্রহণ বৈধ। অন্যথায় মসজিদগুলো ইমামশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। (আহকামুল ইমামি ওয়াল ইতিমামি, পৃ. ৭৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ইসলামে ইমাম-মুয়াজ্জিন-খাদেমের মর্যাদা
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যে সম্মানী গ্রহণ করা হয় তা বিনিময় বা পারিশ্রমিক নয়; বরং সেটা জীবিকার এমন ব্যবস্থা, যা মানুষকে আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে সাহায্য করে।’ (আল ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যা: পৃ. ৪৯২)
খ. মুসল্লিদের থেকে চাঁদা তুলে বেতন
সাধারণত মসজিদের সম্পদ বা ফান্ড থেকে ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন দেওয়া হবে। প্রয়োজনে মুসল্লিদের থেকে চাঁদা তুলে ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতন দেয়া বাঞ্ছনীয়। মসজিদের দানবাক্সের টাকা থেকেও ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন প্রদান শরিয়তসম্মত। কারণ সেটাও মসজিদের জরুরি প্রয়োজন। (ফাতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৩৬৮; আল বাহরুর রায়েক: ৫/৩৫৬)
মসজিদ কমিটির করণীয়
১. অর্থ সংগ্রহে সচেষ্ট হওয়া
- মুসল্লিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা ও নিয়মিত অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা।
- সম্পদশালী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা।
- মসজিদের জন্য স্থায়ী আয়ের উৎস (ওয়াকফ, দোকান ভাড়া ইত্যাদি) তৈরি করা।
২. বিকল্প সমাধান
- আয়ের উৎস কম হলে ইমামের সাথে খোলামেলা আলোচনা করে সীমাবদ্ধতার কথা জানানো।
- স্থানীয় সম্প্রদায়, প্রবাসী ও সমাজসেবী সংগঠনগুলোর সহায়তা নেওয়া।
আরও পড়ুন: মসজিদের ইমাম: মর্যাদা ও দায়িত্ব
৩. ইমামের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা
- তহবিল সংকটে ইমামকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া (যেমন: বাসস্থান, খাদ্য সহায়তা)।
- ইসলামি শিক্ষা বা পরামর্শদাতা হিসেবে কাজের মাধ্যমে তার জন্য অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তৈরি করা।
৪. শরিয়তের সারসংক্ষেপ
- ইমামের ন্যায্য বেতন তার হক
- মসজিদের তহবিল থেকে বেতন দেওয়া জায়েজ
- আর্থিক সংকটে বিকল্প ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি
শেষ কথা, ইমাম সাহেবের মানসিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা মুসল্লি ও মসজিদ কমিটির যৌথ দায়িত্ব। মসজিদে পর্যাপ্ত তহবিল থাকলে ন্যায্য বেতন প্রদান ফরজসম্মত দায়িত্ব, আর সংকটের সময় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে তার জীবিকা নির্বাহের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা অপরিহার্য।

