ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো মানুষ ও সৎ সঙ্গের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআন-হাদিসের আলোকে ভালো মানুষের পরিচয় হলেন যারা সহজ-সরল, সত্যবাদী, আমানতদার, হারাম থেকে দূরে থাকেন, দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত এবং আল্লাহকে ভয় করে চলেন।
ভালো মানুষের কোরআনি সংজ্ঞা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সংসর্গ গ্রহণ কর।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট যে, আল্লাহওয়ালা ও সত্যবাদী ব্যক্তিদের সঙ্গই মুমিনের জন্য শ্রেয়।
হাদিসে ভালো মানুষের পরিচয়
রাসুলুল্লাহ (স.) ভালো মানুষের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘যার থেকে সবাই মঙ্গলের আশা করে এবং তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে।’ (তিরমিজি: ২২৬৩) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১১৯)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: আল্লাহ সহজ-সরল মানুষের জন্য যা রেখেছেন
সৎ সঙ্গের উপকারিতা
সৎলোকের সংশ্রবে থাকার ফলে ব্যক্তি কল্যাণমুখী শিক্ষা ও সদুপদেশ লাভ করে। সৎকাজ করা ও অসৎকাজ থেকে দূরে থাকার প্রেরণা পাওয়া যায়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে।
অসৎ সঙ্গের ভয়াবহ পরিণতি
রাসুলুল্লাহ (স.) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতি অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৩)
হাদিসে সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর তুলনা করা হয়েছে আতর বিক্রেতা ও কামারের হাপরের সাথে। ‘কস্তুরী বহনকারী থেকে আপনি কিছু না কিনলেও সুবাস পাবেন। আর কামারের হাপর আপনার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, নয়তো দুর্গন্ধ দেবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫১৩৬)
আরও পড়ুন: অন্যের সম্মান রক্ষা করলে আল্লাহ আপনাকে যেভাবে সম্মানিত করবেন
পরকালীন চেতনা
হাশরের দিন অসৎ সঙ্গীদের জন্য মানুষ আফসোস করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম!’ (সুরা ফুরকান: ২৭-২৮)
ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সোহবতে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত ওমর (রা.), হজরত ওসমান (রা.) ও হজরত আলী (রা.)-এর মতো মহান ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠেছেন। অন্যদিকে ফেরাউন, নমরুদ বা কারুনের সঙ্গীরা ধ্বংস হয়েছে।
আল্লাহর নির্দেশ
আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলকে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘আপনি দৃঢ়চিত্ত হয়ে তাদের সঙ্গে অবস্থান করুন, যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রতিপালককে আহ্বান করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের সন্ধানে। পার্থিব জীবনের শোভা ও চাকচিক্য কামনায় আপনি তাদের থেকে আপনার দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না।’ (সুরা কাহাফ: ২৮)
পরিণতি সম্পর্কে সতর্কবাণী
আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘মানুষ যাকে ভালবাসবে (কেয়ামতের দিন) সে তারই সাথী হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬১৬৮, ৬১৬৯)
মূলত, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে জানেন, তা মেনে চলেন এবং মানুষকে সেই নসিহত করেন—এমন মানুষের সংশ্রবে থাকা অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহণ করেই মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হতে পারে।

