ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন এবং মানব জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। রাসুলুল্লাহ (স.) সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য বিয়েকে অপরিহার্য করেছেন। কারণ বিয়ে কেবল একটি সামাজিক চুক্তি নয়, বরং এটি ঈমান রক্ষার ঢাল এবং মানবিক পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম। সাহাবি আক্কাফ (রা.)-এর ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করলে নবীজি কতটা কঠোর ভাষায় সতর্ক করতেন।
সাহাবি আক্কাফ (রা.)-এর ঘটনা
হজরত আবুজর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) আক্কাফ (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘হে আক্কাফ! তোমার স্ত্রী আছে?’
তিনি বললেন- ‘না।’
রাসুল (স.) আবার বললেন- ‘তোমার কি সম্পদ ও সচ্ছলতা আছে?’
তিনি বললেন- ‘হ্যাঁ।’
তখন রাসুলুল্লাহ (স.) কঠোর ভাষায় বললেন- ‘তুমি এখন শয়তানের ভাইদের অন্তর্ভুক্ত। যদি তুমি খ্রিস্টান হতে তবে তাদের রাহেব হতে। নিশ্চয়ই বিয়ে করা আমাদের রীতি। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে অবিবাহিত। মৃতদের মধ্যেও সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে অবিবাহিত।’
এরপর তিনি আরও বললেন- ‘শয়তানের কাছে নারীর চেয়ে ভয়ঙ্কর কোনো অস্ত্র নেই, যা ধর্মভীরু মানুষের ওপরও কার্যকর। কিন্তু যারা বিয়ে করেছে, তারা নারীর ফেতনা থেকে সুরক্ষিত।’ (মুসনাদে আহমদ; জামেউল ফাওয়ায়েদ; ইমদাদুল ফতোয়া, খণ্ড ২, পৃ. ২৫৯)
আরও পড়ুন: কত বছর বয়সে বিয়ে করতে বলেছেন নবীজি
ইবাদতের নামে বিয়ে এড়ানো
একদল লোক নবীজির কাছে এসে কথাবার্তা বলছিল। একজন বলল- ‘আমি সারাজীবন রাতভর নামাজ পড়ব।’ অন্যজন বলল- ‘আমি সবসময় রোজা রাখব।’ আরেকজন বলল- ‘আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনো বিয়ে করব না।’
এসব কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন- ‘তোমরা কি এসব কথা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। অথচ আমি নামাজ পড়ি, ঘুমাইও; রোজা রাখি, আবার ভাঙিও এবং নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নতের অনুসরণ করবে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪০১; মুসনাদে আহমাদ: ১৩৫৩৪)
বিয়ের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্যবান, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি সংযত রাখে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে বিয়েতে অক্ষম, সে যেন রোজা রাখে, কেননা তা যৌন শক্তি দমন করে।’ (সহিহ বুখারি: ৫০৬৬; সহিহ মুসলিম: ১৪০০)
আরও পড়ুন: আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করলে শুদ্ধ হবে কি?
বিয়ে দ্বীনের অর্ধেক
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। তাই বাকি অর্ধেক অংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির: ৬১৪৮; আল-মুস্তাদরাক: ২৭২৮)
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিয়ে না করা ইসলামি শিক্ষার পরিপন্থী। বিয়ে হলো সুন্নতের অনুসরণ এবং শয়তানের ফিতনা থেকে বাঁচার কার্যকর মাধ্যম। তাই মুসলিম সমাজের উচিত বিয়ে-বিমুখতা পরিহার করে ইসলামের নির্দেশিত পথে চলা। আল্লাহ তাআলা সকল সামর্থ্যবান মুসলিম যুবক-যুবতীকে যথাসময়ে বিয়ে করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

