রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বদরের অলৌকিক বিজয়: যখন ফেরেশতারা নেমে এলেন যুদ্ধক্ষেত্রে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

বদরের অলৌকিক বিজয়: যখন ফেরেশতারা নেমে এলেন যুদ্ধক্ষেত্রে

ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ ছিল হক (সত্য) ও বাতিলের (মিথ্যা) মধ্যে প্রথম নিষ্পত্তিমূলক লড়াই। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান, যা ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ বা ‘হক-বাতিলের পার্থক্যের দিন’ নামে পরিচিত। বদরের প্রান্তরে মুসলিমদের সংখ্যা, সামরিক প্রস্তুতি এবং সাহস যেন এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দেয়। এই যুদ্ধ চিরকাল মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অবিস্মরণীয় প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

অসম শক্তি ও প্রস্তুতি

বদরের প্রান্তরে মুসলমানদের সেনাবাহিনী ছিল মাত্র ৩১৩ জন। তাঁদের কাছে ছিল অত্যন্ত সীমিত অস্ত্রসজ্জা; মাত্র তিনটি ঘোড়া, ছয়টি বর্শা, আটটি তলোয়ার ও বাহনের জন্য ৭০টি উট। অন্যদিকে, মক্কার কাফিররা এক বিশাল ও সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার, সঙ্গে ছিল ১০০টি ঘোড়া, ৭০০টি উট এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলমানদের পক্ষে এই যুদ্ধে জয়লাভ করা অসম্ভব মনে হলেও তাঁদের ঈমানের শক্তি ছিল অপ্রতিরোধ্য। (সিরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩৮)

আরও পড়ুন: বদরযুদ্ধে অংশ নেওয়া সাহাবিদের অনন্য মর্যাদা

ঐশী সাহায্য ও ফেরেশতাদের অবতরণ

যুদ্ধের আগে মহানবী (স.) সৈন্যদের সুসংগঠিত করে একটি গাছের নিচে রাত্রিযাপন করেন। আল্লাহ এই দুর্বল মুসলিমদেরকে বিশেষ নিদ্রা ও বৃষ্টি দান করেন, যা তাঁদের মানসিক শক্তি ও শারীরিক প্রস্তুতি বাড়িয়ে দেয়। (সুরা আনফাল: ১১)


বিজ্ঞাপন


যুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনা করেন। আল্লাহ এক হাজার ফেরেশতা দিয়ে মুসলিমদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। (সুরা আনফাল: ৯) এরপর জিবরাঈল (আ.) ধুলিমাখা অবস্থায় ঘোড়ায় আগমন করেন এবং আবু বকর (রা.)-কে সুসংবাদ দেন। কোরআনে বলা হয়েছে- আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গেই আছি, তোমরা ঈমানদারদেরকে অবিচল রাখো।’ (সুরা আনফাল: ১২)

যুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্ত ও আবু জাহলের পরিণতি

রাসুলুল্লাহ (স.) শত্রুদের দিকে এক মুষ্টি মাটি নিক্ষেপ করেন। আল্লাহর কুদরতে সেই মাটি প্রতিটি শত্রুর চোখ, নাক ও মুখে প্রবেশ করে। (সুরা আনফাল: ১৭) এরপর মুসলিম বাহিনী 'জান্নাতের সুসংবাদ' নিয়ে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আল্লাহর সাহায্যে কুরাইশদের বিশাল বাহিনী পরাজিত হয়। যুদ্ধ শেষে তাদের ৭০ জন নেতা নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দি হয়। অন্যদিকে, মাত্র ১৪ জন সাহাবি শাহাদাত বরণ করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২৮৩)

আরও পড়ুন: মক্কার মুশরিকরা গোপনে নবীজির তেলাওয়াত শুনত যেভাবে 

এই যুদ্ধে কুরাইশদের অহংকার চূর্ণ হয়। তাদের নেতা আবু জাহলের পরিণতি ছিল করুণ। দুই আনসার তরুণ মুয়াজ বিন আমর ও মুয়াজ বিন আফরা তাকে আঘাত করে। পরে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তার মস্তক নবীজি (স.)-এর কাছে নিয়ে যান। নবীজি তাকে আখ্যা দেন- ‘এই উম্মতের ফিরাউন’।

বদরের তাৎপর্য ও চিরন্তন শিক্ষা

বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে ছিল এক 'টার্নিং পয়েন্ট'। এটি প্রমাণ করে যে, সংখ্যায় কম হলেও ঈমান ও আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা থাকলে বিজয় অবশ্যম্ভাবী। এই বিজয় মুসলিম সমাজের ভিত্তি শক্তিশালী করে এবং মক্কার কুরাইশদের মনোবল ভেঙে দেয়। বদরের বর্ণনা কোরআনের একাধিক সূরায় এসেছে, যা এই যুদ্ধের গভীর গুরুত্ব বহন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা দুর্বল ছিলে’ (সুরা আলে ইমরান: ১২৩)। এই যুদ্ধ মুসলিম উম্মাহকে ধৈর্য, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর উপর নির্ভরতার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে, যা আজও মানবতার জন্য প্রাসঙ্গিক।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর