সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তায়েফের বেদনার স্মৃতি: নবীজির (স.) ধৈর্য ও ক্ষমার অনন্য দৃষ্টান্ত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

তায়েফের বেদনার স্মৃতি: নবীজির (স.) ধৈর্য ও ক্ষমার অনন্য দৃষ্টান্ত

ইসলামের ইতিহাসে তায়েফ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। পবিত্র মক্কা নগরী থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এ নগরী নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। বিশেষ করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনে তায়েফের একটি বেদনাবিধুর অধ্যায় আজও মুসলিম হৃদয়ে গভীরভাবে নাড়া দেয়।

তায়েফ ছিল বনি সাকিফ গোত্রের বসবাসস্থল। ওই গোত্রেই ছিলেন নবীজির দুধমাতা হজরত হালিমা সাদিয়া (রা.), যাঁর ঘরেই শিশু মুহাম্মদ (স.) লালিত-পালিত হয়েছিলেন। পরবর্তী জীবনে, নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য যখন মক্কাবাসীদের কাছ থেকে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তায়েফে আশ্রয় নেন, তখন আশা করেছিলেন- তাদের হৃদয় হয়তো মক্কাবাসীর তুলনায় নরম ও গ্রহণযোগ্য হবে।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তায়েফবাসীরা তাঁর প্রতি কোনো সদ্ব্যবহার তো করেইনি, বরং উল্টো তাঁকে নির্মমভাবে অপমান ও নির্যাতন করেছে। তারা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পেছনে দুষ্ট ছেলে ও দাসদের লেলিয়ে দিয়েছিল। তারা তাঁকে উপহাস করল, গালমন্দ করল এবং পাথর নিক্ষেপ করল। নবীজির (স.) পা রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল। চলতে না পেরে তিনি বসে পড়লেন, কিন্তু তাতেও কেউ দয়া দেখায়নি। নির্দয়ভাবে তাঁকে আবার পাথর মেরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

এই যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা শেষে তিনি তায়েফ ত্যাগ করেন। তবুও তাঁর মনে ছিল না প্রতিশোধের আগুনে, বরং ছিল ভালোবাসা, দয়া ও ক্ষমা।

আরও পড়ুন: রাসুল (স.)-এর প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্ব: একটি কালোত্তীর্ণ মডেল

আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতার প্রস্তাব এবং নবীজির (স.) করুণাময় জবাব

তীব্র অবমাননার পর তিনি যখন তায়েফ ছেড়ে কর্নে সা'আলেব নামক স্থানে পৌঁছান, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতা প্রেরিত হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘আমি আবদে ইয়ালিল ইবনে আবদে কুলালের সন্তানদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা গ্রহণ করেনি। আমি দুঃখ ও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে কর্নে সা’আলেবে পৌঁছে মাথা তুলে দেখি, একটুকরো মেঘ আমার ওপর ছায়া ফেলছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, সেখানে জিবরাইল (আ.) উপস্থিত। তিনি বলেন, ‘আপনার জাতি আপনাকে যা করেছে, আল্লাহ তা সব শুনেছেন। আল্লাহ আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেশতা পাঠিয়েছেন।’

পাহাড়ের ফেরেশতা এসে নবীজিকে (স.) বলেন- ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি অনুমতি দিলে আমি এদের দুই পাহাড়ের মাঝখানে পিষে ধ্বংস করে দেব।’

কিন্তু করুণায় পূর্ণ মহানবী (স.) সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন- ‘না, আমি আশা করি, আল্লাহ তাদের বংশধরদের মধ্যে এমন মানুষ সৃষ্টি করবেন, যারা শুধু আল্লাহর উপাসনা করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।’ (সহিহ বুখারি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৫৮)

তায়েফের এই ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য ধৈর্য, সহনশীলতা ও ক্ষমার এক অনন্য পাঠ। আসুন, আমরা তাঁর জীবনী থেকে সত্যিকারের সবরের শিক্ষা গ্রহণ করি। দুনিয়ার যেকোনো অন্যায়, কষ্ট ও বিদ্বেষের মুখেও যেন তাঁর মতো করুণাময় আচরণ ও দোয়ার উদাহরণ আমরা অনুসরণ করতে পারি। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আদর্শে জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর