ইসলামে কৃতজ্ঞতা বা ‘শুকরিয়া’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আল্লাহর অগণিত নেয়ামতের স্বীকৃতি এবং তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন। কোরআন ও হাদিসে কৃতজ্ঞ বান্দাদের উচ্চ মর্যাদা এবং তাদের প্রশংসায় অসংখ্য বাণী এসেছে।
কৃতজ্ঞতা মুমিনের সফলতার সোপান
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা একজন মুমিনের ঈমান ও আমলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাসুল (স.) তাঁর প্রিয় সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)-কে শিখিয়েছিলেন, নামাজের পর এই দোয়াটি পড়তে- ‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা যিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’ (অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার জিকির, আপনার কৃতজ্ঞতা ও সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।) (মুসনাদে আহমাদ: ২২১১৯)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর জিকির ও উত্তম ইবাদতের মতোই কৃতজ্ঞতা প্রকাশও একটি অত্যন্ত মূল্যবান আমল।
কৃতজ্ঞতা নেয়ামত বৃদ্ধি করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)
শয়তানের উদ্দেশ্য অকৃতজ্ঞ বানানো
কিন্তু শয়তানের উদ্দেশ্য মানুষকে অকৃতজ্ঞ বানানো। শয়তান বলেছে, ‘আপনি দেখবেন ওদের (মানুষের) বেশিরভাগই কৃতজ্ঞ নয়।’ (সুরা আরাফ: ১৭)
কৃতজ্ঞতা নবী-রাসুলদের ভূষণ
আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী-রাসুলদের কৃতজ্ঞতার শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা দাউদ (আ.)-কে বলেন, ‘হে দাউদ-পরিবার, কৃতজ্ঞতাসহকারে কাজ করে যাও। (যদিও) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।’ (সুরা সাবা: ১৩)
কোরআনে নুহ (আ.)-কে ‘একজন কৃতজ্ঞ বান্দা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সুরা ইসরা: ৩) ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তিনি ছিলেন আল্লাহর নিয়ামতের শোকরকারী। আল্লাহ তাকে মানোনীত করেছিলেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন।’ (সুরা নাহল: ১২১)
আরও পড়ুন: দুঃখের সময় আলহামদুলিল্লাহ বললে কী হয়
প্রিয়নবী (স.) ছিলেন কৃতজ্ঞ বান্দার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.) ছিলেন কৃতজ্ঞ বান্দার অনন্য দৃষ্টান্ত। আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (স.) রাতে এত বেশি ইবাদত করতেন যে তাঁর পা ফেটে যেত। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবুও কেন এত ইবাদত?’ তিনি বললেন, ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?’ (সহিহ বুখারি: ৪৮৩৭)
রাসুল (স.) জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। ঘুম থেকে উঠে, খাবার গ্রহণ করে, নতুন পোশাক পরে—সর্বাবস্থায় তিনি আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭৩৪)
আরও পড়ুন: যে জিকিরগুলো আপনাকে শক্তি যোগাবে
বিপদ ও দুঃখের সময়ে কৃতজ্ঞতার প্রতিদান
এমনকি বিপদের সময়ও একজন মুমিন আল্লাহর প্রশংসা করে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, যখন কোনো বান্দার সন্তান মারা যায় এবং সে ধৈর্য ধরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে, তখন আল্লাহ সেই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন, যার নাম ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসার ঘর)। (তিরমিজি: ১০২১)
পরিশেষে, প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো- সর্বদা আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। জীবন, মেধা, জ্ঞান, আলো, বাতাস, পানি, সম্পদ—সবই আল্লাহর দান। তাই প্রতিনিয়ত আমাদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হওয়া উচিত ‘আলহামদুলিল্লাহ’। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

