ইসলামে দোয়া একটি স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (আবু দাউদ: ১৪৮১) হাদিসে আরও এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে সম্মানিত কিছু নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯) রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি: ২১৩৯)
দোয়া কখনো বিফলে যায় না
দোয়া কখনোই বৃথা যায় না। আল্লাহ তাআলা কোনো বান্দার দোয়াকে ফেলনা মনে করেন না। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন- ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)
হাদিসে এসেছে, পাপাচার বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার জন্য নয়—এমন দোয়া আল্লাহ তাআলা তিনটি উপায়ে কবুল করেন। ১. হয় তিনি দোয়াটি তৎক্ষণাৎ কবুল করেন ২. অথবা তা আখেরাতের জন্য জমা রাখেন, ৩. অথবা কোনো বিপদ বা ক্ষতি দূর করে দেন। (আল আদাবুল মুফরাদ: ৭১০; মুসনাদে আহমদ: ১১১৩৩)
আরও পড়ুন: ৫ আদব না মানলে আপনার মোনাজাত অর্থহীন
তাৎক্ষণিক ফল না পেলে হতাশ হওয়া অনুচিত
দোয়ার পরপর ফল না পেলেও হতাশ হওয়া উচিত নয়। বরং একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো ধৈর্য ধরতে থাকা এবং আল্লাহর হিকমতের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা। তিনি কাকে কখন কীভাবে দান করবেন, সেটা সম্পূর্ণ তাঁর জ্ঞানের ব্যাপার।
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘তোমরা অনেক সময় এমন কিছু অপছন্দ করো যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আর অনেক কিছু পছন্দ করো যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা: ২১৬)
আরও পড়ুন: সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট দোয়া
না দেওয়াটাও হতে পারে প্রতিদানেরই এক রূপ
বিশিষ্ট তাবেঈ সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে না দেওয়াটাও এক ধরনের দান। কেননা, এর মাধ্যমে তিনি বান্দাকে কৃপণতা ও খারাপ কাজ থেকে রক্ষা করেন। মূলত, তিনি বান্দার কল্যাণের দিকেই নজর রাখেন।’ (মাদারিজুস সালিকিন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২১৫)
দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে দোয়া করুন
দোয়া করার সময় মুমিনের উচিত দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস রাখা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘তোমরা কেউ দোয়া করার সময় যেন এভাবে না বলো- ‘হে আল্লাহ! আপনি যদি চান তবে আমাকে ক্ষমা করুন, যদি চান তবে দয়া করুন।’ বরং দৃঢ়তার সঙ্গে চাও। কারণ আল্লাহ যা চান, তাই করেন—তাঁকে কেউ বাধ্য করতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি: ৭৪৭৭)
আর তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ বান্দার সঙ্গে তেমনই আচরণ করেন, যেমনটি সে আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা করে।’ (সহিহ বুখারি: ৭৪০৫; মুসলিম: ২৬৭৫)
আরও পড়ুন: ৬ শ্রেণির মানুষ দোয়া করলেই কবুল
দোয়ার জন্য উত্তম সময়
যদিও যেকোনো সময় দোয়া করা যায়, তবে রাতের শেষ অংশ দোয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকলে আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা করেন- কে আছে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে রিজিক চায়? আমি তাকে রিজিক দেব। কে ক্ষমা চায়? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি: ১১৪৫; সহিহ মুসলিম: ৭৫৮)
আরও পড়ুন: যে দোয়া ৩ বার পড়লে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না
শেষ কথা, দোয়া আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগের মাধ্যম, যা বিশ্বাস, আত্মসমর্পণ ও আস্থা দ্বারা পূর্ণ। মুমিনের করণীয়- আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাস রেখে, নিয়মিত ও আন্তরিকভাবে দোয়া করে যাওয়া। কারণ, আল্লাহ কখনো কোনো দোয়া উপেক্ষা করেন না।

