রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নবীজির (স.) আদর্শে ওয়াজ-মাহফিল করবেন যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

নবীজির (স.) আদর্শে ওয়াজ-মাহফিল করবেন যেভাবে

নবীজির (স.) ওয়াজ-মাহফিলের আদর্শ

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ওয়াজ-মাহফিল ছিল সরল, গভীর ও হৃদয়স্পর্শী। তিনি মসজিদে, পথে বা যুদ্ধের প্রস্তুতির মাঝেও সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতেন, যা তাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছিল। তাঁর মাহফিলে কোনো জাঁকজমক বা বাহ্যিক আড়ম্বর ছিল না— ছিল শুধু আল্লাহভীতির আন্তরিক বাণী।


বিজ্ঞাপন


সাহাবিদের বর্ণনা

আবু ওয়ায়েল (রহ.) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সপ্তাহে একদিন নসিহত করতেন। প্রতিদিন নসিহত করার অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-ও মাঝেমধ্যে নসিহত করতেন, যাতে শ্রোতা বিরক্ত না হয়।’ (বুখারি: ৭০)

নবীজির বক্তব্য ছিল সংক্ষিপ্ত, সহজবোধ্য ও শিক্ষণীয়। সাহাবিরা বর্ণনা করেন, নবীজি (স.) দীর্ঘ ভাষণ দিতেন না; তাঁর কথা এত সুস্পষ্ট ছিল যে প্রত্যেক শ্রোতা তাঁর কথা বুঝত।’ (আবু দাউদ: ৪৮৩৯) রাসুল (স.) বলেন, ‘আমাকে দান করা হয়েছে সর্বমর্মী বচন।’ (মুসলিম: ৫২৩) সাহাবিদের বক্তব্যে আরও এসেছে, ‘রাসুল (স.) এমনভাবে কথা বলতেন, যদি কোনো গণনাকারীর গণনা করতে ইচ্ছা করে তবে সে গুনতে পারবে।’ (মুসলিম: ৭৩৯৯)

বর্তমান ওয়াজ-মাহফিল: ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক

ইতিবাচক দিক
১. দ্বীনি জাগরণ: ওয়াজ-মাহফিল সমাজে ধর্মীয় চেতনা ও নৈতিকতা ফিরিয়ে আনছে।
২. অপসংস্কৃতি রোধ: যাত্রাপালা বা বাউলগানের স্থান এখন অনেক ক্ষেত্রে ওয়াজ-মাহফিল নিচ্ছে।
৩. আমল বৃদ্ধি: অনেকেই নামাজ, কোরআন শিক্ষা বা পর্দা পালন শুরু করে এসব মাহফিলের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: দাওয়াত ও তাবলিগ কেন গুরুত্বপূর্ণ

নেতিবাচক দিক
১. অপচয় ও বাহুল্য: বিশাল প্যান্ডেল, উচ্চপ্রযুক্তির সাউন্ড সিস্টেম, আলোকসজ্জা ও বক্তাদের মোটা পারিশ্রমিক ইসলামি আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ২৭)
২. রিয়াকারিতা: কিছু ক্ষেত্রে ওয়াজ লোকপ্রিয়তা বা আর্থিক লাভের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন রিয়াকারীকে বলা হবে- দুনিয়ায় প্রদর্শন করতে, দেখো তাদের যাও, দেখো কোনো প্রতিদান পাও কি না।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৬৩৬)
৩. শব্দদূষণ ও অসুবিধা: রাত গভীর পর্যন্ত উচ্চস্বরে ওয়াজ চালানো শিশু, রোগী ও সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টকর। নবীজি (স.) বলতেন, ‘একে অপরকে কষ্ট দিও না।’ (মুয়াত্তা মালিক: ৩৯)

সংস্কারের প্রস্তাবনা

১. সুন্নাহভিত্তিক পদ্ধতি: সংক্ষিপ্ত, প্রাসঙ্গিক ও হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য রাখা।
২. সাধারণ আয়োজন: মসজিদ বা খোলা স্থানে সরলভাবে আয়োজন করা।
৩. সময়সীমা: রাত ১১টার মধ্যে মাহফিল শেষ করা।
৪. নিয়ত পরিশুদ্ধি: শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওয়াজ করা।
৫. সমালোচনা পরিহার: আলেমদের মধ্যে অনৈক্য বা সমালোচনা না করা। ‘রাসুল (স.) অশালীন, অভিশাপকারী ও গালিদাতা ছিলেন না।’ (বুখারি: ৬০৬৪)

শেষ কথা, ওয়াজ-মাহফিল ইসলামি দাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, তবে তা সুন্নাহের আদলে পরিচালিত হওয়া জরুরি। অপচয়, রিয়া ও অসুবিধা এড়িয়ে সহজ-সরলভাবে দাওয়াতি কাজ চালানো উচিত। রাসুল (স.)-এর নির্দেশনা অনুসারে, ‘সহজ করো, কঠিন করো না; সুসংবাদ দাও, বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করো না।’ (বুখারি: ৬৯)। আল্লাহ আমাদেরকে নিষ্ঠার সাথে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর