এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টকে ঘিরে প্রতি বছর যে লাগামহীন উন্মাদনা দেখা যায়, তা আমাদের সমাজের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মতপ্রকাশ করেছেন ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। এই প্রসঙ্গে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরেছেন।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা নিঃসন্দেহে আনন্দের বিষয়। তবে সেই আনন্দের উদযাপন একটি শোভনীয় মাত্রার মধ্যে থাকা উচিত। তিনি এও উল্লেখ করেছেন, আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে যেভাবে সংবাদ কাভারেজ দেয়, তা অন্যকোনো দেশে দেখা যায় না।
বিজ্ঞাপন
উন্মাদনার নেতিবাচক প্রভাব
পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে এই অতিরিক্ত উন্মাদনার কারণে যারা ভালো করতে পারে না, তাদের মধ্যে অপরাধবোধ তৈরি হয়। এমনকি, অনেক শিক্ষার্থী ডিপ্রেশনে চলে যায় এবং এক পর্যায়ে কেউ কেউ আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর পথও বেছে নেয়। এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ও মিডিয়াকে দায়ী করেছেন তিনি। শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, সামগ্রিক জীবনের সাফল্যের তুলনায় একটি পরীক্ষায় ভালো ফল করা খুব বড় ঘটনা নয়। তবুও এই উন্মাদনা প্রমাণ করে যে আমরা দিন দিন ভোগবাদী, বস্তুবাদী এবং পরকাল ভুলে যাওয়া মানুষ হয়ে উঠছি।
আরও পড়ুন: মা-বাবার বিরুদ্ধে সন্তানের মামলা, শায়খ আহমাদুল্লাহর প্রতিক্রিয়া
সন্তানের সৎ কাজের প্রশংসা নেই
তিনি আরও বলেন, খুব কম বাবা-মা আছেন যারা সন্তানের সৎ কাজের জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বিপদের মুখেও সন্তান সত্য কথা বলেছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে কিংবা ঘুষ নেয়নি—এমন ঘটনায় সন্তানের প্রশংসা বা উদযাপন খুবই বিরল। অথচ পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ার কারণে মিষ্টি বিতরণের ঘটনা অহরহ দেখা যায়।
সাময়িক সাফল্য বনাম চূড়ান্ত সফলতা
শায়খ আহমাদুল্লাহ মনে করিয়ে দেন, জিপিএ ৫ পাওয়া একটি সাময়িক সাফল্য। জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য তখনই আসবে, যখন একজন মানুষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এটিকেই আসল সফলতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “বুদ্ধিমান তো সে, যে সাময়িক সাফল্যের ফাঁদে আটকা না পড়ে চূড়ান্ত সফলতার জন্য কাজ করে যায়।”
আরও পড়ুন: রেজাল্টের পর আত্মহত্যা, যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
উন্মাদনা থেকে দূরে থাকার আহ্বান
শায়খ আহমাদুল্লাহ তার পোস্টে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জীবন একটি দীর্ঘ জার্নি। জিপিএ ৫ পাওয়া মানেই জীবনের সফলতা নয়। অনেক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পাওয়ার পরও জীবনে ব্যর্থ হয়, আবার অনেকে জিপিএ ৫ না পেয়েও জীবনে সফল হয়। তাই সাময়িক সাফল্যকে অতিরিক্ত উদযাপন না করে চূড়ান্ত সফলতার জন্য কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শায়খ আহমাদুল্লাহর এই মতামত আমাদের সমাজে পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অতি উন্মাদনার বিপরীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

