রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মানুষ হত্যা: কী শাস্তি অপেক্ষা করছে পরকালে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

মানুষ হত্যা: কী শাস্তি অপেক্ষা করছে পরকালে

ইসলামে মানুষের জীবন অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানিত। নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে ইসলামে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধগুলোর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে এ অপরাধের ভয়াবহতা এবং শাস্তি সম্পর্কে স্পষ্ট সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

কোরআনের কঠোর হুঁশিয়ারি

আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন তামাম মানুষকেই হত্যা করল। আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো।’ (সুরা মায়েদা: ৩২)

এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে যে, একজন নিরপরাধ মানুষের জীবনহরণ পুরো মানবতাকে হত্যার শামিল।

আরও পড়ুন: জুলুম অনেক বড় গুনাহ

হাদিসে মানবহত্যার ভয়াবহতা

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘মুসলিম ভাইকে গালি দেওয়া গুনাহ, আর তাকে হত্যা করা কুফুরির শামিল।’ (সহিহ মুসলিম: ১২৪)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারি: ৬৮৭১, মুসলিম: ৮৮)

এখানেও স্পষ্টভাবে মানুষ হত্যার কঠিন পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।

আখেরাতে মানুষহত্যার পরিণতি

আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম—সে সেখানে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিশাপ দিয়েছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা নিসা: ৯৩)

কেয়ামতের দিন প্রথম বিচার হবে রক্তপাতের। হাদিসের ভাষায়- ‘কেয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে তা হলো, রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।’ (বুখারি: ৬৩৫৭)  নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর মাথার অগ্রভাগ নিজ হাতে ধরে এ কথা বলতে বলতে আরশের কাছে নিয়ে আসবে ‘হে প্রভু! সে আমাকে হত্যা করেছে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৫৫১, তিরমিজি: ২৯৫৫)

আরও পড়ুন: ছোট-বড় সব গুনাহ মাফের দোয়া ও আমল

ইসলামি আইনে শাস্তির বিধান

শরিয়তে হত্যার শাস্তি হলো কিসাস (প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ) অথবা দিয়াত (রক্তপণ)। তবে ক্ষমা করার ব্যবস্থাও রয়েছে। আল্লাহ বলছেন- ‘হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর ‘কিসাস’ ফরজ করা হয়েছে। ... তবে যাকে কিছুটা ক্ষমা করা হবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে, তাহলে সততার অনুসরণ করবে...।’ (সুরা বাকারা: ১৭৮)

তবে দুনিয়াতে ক্ষমা করা হলেও আখেরাতের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, যদি আল্লাহ ক্ষমা না করেন।

শেষ কথা, মানুষ হত্যা শুধু আইনি অপরাধ নয়—ইসলামে এটি একটি চরম ও সীমালঙ্ঘনীয় পাপ। কোরআন-হাদিসে বারবার এই জঘন্য অপরাধের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। তাই একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো মানবতার সেবা করা এবং প্রাণহানির মাধ্যমে চিরকালীন আখেরাতের ধ্বংস ডেকে না আনা।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর