শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হতাশা থেকে বাঁচার দোয়া

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

হতাশা থেকে বাঁচার দোয়া

জীবনের পথে চলতে গিয়ে মানুষ নানারকম সমস্যার মুখোমুখি হয়। চিন্তা, উৎকণ্ঠা, ব্যর্থতা, দুশ্চিন্তা ও হতাশা তাকে মাঝে মাঝে এতটাই পীড়িত করে তোলে যে, চারপাশে কেবল অন্ধকারই মনে হয়। কখনো জীবনের অনিশ্চয়তা, কখনো অভাব-অনটন, আবার কখনো পারিবারিক বা সামাজিক সংকটে পড়লে মন বিষণ্ন হয়ে পড়ে। এ সময় একজন মুমিনের আশ্রয় একমাত্র আল্লাহর কাছেই। তিনিই শান্তির উৎস, তিনি বান্দার ভরসাস্থল।

ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়—জীবনের যেকোনো সংকট ও হতাশায় আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা এবং দোয়ার মাধ্যমে তাঁর সাহায্য চাওয়া। প্রিয়নবী (স.) নিজেও জীবনের প্রতিটি সংকটে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। নিচে সহিহ হাদিস থেকে এমন কয়েকটি দোয়া তুলে ধরা হলো, যেগুলো আমাদের মানসিক কষ্ট, হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে পারে।


বিজ্ঞাপন


প্রিয়নবী (স.)-এর শেখানো বিশেষ দোয়া

প্রিয়নবী (স.) যেকোনো ধরণের চিন্তা ও উৎকণ্ঠার সময় ছোট্ট একটি দোয়া নিয়মিত পাঠ করতে বলেছেন। দোয়াটি হলো-

حَسْبِيَ اللَّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ: হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াককালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।
অর্থ: আল্লাহ তাআলাই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তাঁরই ওপর আমি ভরসা করি। তিনিই মহা আরশের অধিপতি।

হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ দোয়াটি সকাল ও সন্ধ্যায় সাতবার পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সব দুশ্চিন্তা থেকে হেফাজত করবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৩; কানজুল উম্মাল: ৫০১১)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে আল্লাহ সবসময় রহমত করেন

নবীদের পাঠ করা দোয়া

এই দোয়াটি বিপদকালে আল্লাহর দুইজন মহান নবী পাঠ করেছিলেন—হজরত ইবরাহিম (আ.) ও প্রিয়নবী মুহাম্মদ (স.)

হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে যখন তার কওম আগুনে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল, তখন তিনি এই দোয়াটি পাঠ করেছিলেন।

প্রিয়নবী (স.) ওহুদ যুদ্ধের পর মুসলমানদের মনোবল যখন ভেঙে পড়েছিল এবং আবার শত্রুরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন এই দোয়াই ছিল তাঁর আশ্রয়।
(সহিহ বুখারি: ৪৫৬৩)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে জান্নাত ওয়াজিব

আরেকটি দোয়া: দুশ্চিন্তা ও দুর্বলতা থেকে বাঁচার জন্য

চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুল (স.) আরেকটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো—

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল আজঝি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও দুঃখ, অপারগতা ও অলসতা, কৃপণতা ও ভীরুতা এবং ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে।
(সহিহ বুখারি: ২৮৯৩)

ইসলামে হতাশা নিষিদ্ধ

ইসলামে যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর রহমত থেকে আশা না হারানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত কঠিন বিপদই আসুক, একজন মুমিনের মনে ভরসা থাকবে—আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।

আল্লাহ তাআলা বলেন- لَا تَايْـَٔسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللهِ اِلَّا الۡقَوۡمُ الۡكٰفِرُوۡنَ ‘আর তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত থেকে কেবল কাফেররাই নিরাশ হয়।’ (সুরা ইউসুফ: ৮৭)

চিন্তা, উদ্বেগ ও হতাশা আমাদের জীবনের অংশ। কিন্তু তা থেকে মুক্তির উপায়ও ইসলাম আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর ওপর দৃঢ় আস্থা রাখা, নিয়মিত দোয়া করা এবং তাঁর অনুগ্রহে আত্মা প্রশান্ত রাখা—এটাই একজন মুমিনের পথ।

আসুন, আমরা এই মহৎ দোয়াগুলো মুখস্থ করি, অন্তর থেকে পাঠ করি এবং হতাশা নয়—আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা করে সামনে এগিয়ে যাই।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর