সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইস্তেখারা নামাজের ৫ উপকার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ইস্তেখারা নামাজের ৫ উপকার

জীবন চলার পথে আমরা প্রায়ই এমন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হই, যেখানে নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যথেষ্ট মনে হয় না। কখনো দ্বিধা, কখনো ভয়, কখনো সংশয় গ্রাস করে মনকে। এমন সময় একজন মুমিন আল্লাহর সাহায্যের দরজায় ভিখারি হয়ে হাত তোলে। আর সেই দরজার অন্যতম নাম হলো ইস্তেখারা নামাজ।

ইস্তেখারা কেবল একটি নামাজ নয়, বরং এটি আল্লাহর সঙ্গে পরামর্শ করার এক অপূর্ব উপায়—যেখানে বান্দা জানে না, কিন্তু আল্লাহ জানেন। এখানে রয়েছে তাওয়াক্কুল, বিশ্বাস, ও আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতার এক অপূর্ব সমন্বয়। নিচে ইস্তেখারা নামাজের ৫টি বিশেষ উপকার আলোচনা করা হলো।


বিজ্ঞাপন


১. সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক

রাসুলুল্লাহ (স.) বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার ইচ্ছা করে, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেয়। তারপর এই বলে দোয়া করে- ‘হে আল্লাহ! আমি আপনারই ইলমের সাহায্যে মঙ্গল তলব করছি। আপনারই কুদরতের সাহায্যে আমি শক্তি অন্বেষণ করছি। আর আপনারই অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা, আপনই শক্তি রাখেন, আমি কোনো শক্তি রাখি না। আপনই সবকিছু জানেন, আমি কিছু জানিনা। গায়েবি বিষয়াদির বিশেষজ্ঞ একমাত্র আপনি। এরপর নামাজ আদায়কারী মনে মনে স্বীয় উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বলবে, হে আল্লাহ! আমার দ্বীন-দুনিয়া ও পরিণামের ক্ষেত্রে কল্যাণকর হলে আমার জন্য তা নির্ধারন করে দিন এবং তা সুগম করে দিন, আর আমার জন্য এতে বরকত প্রদান করুন। হে আল্লাহ! আর যদি আপনি জানেন যে, এটি আমার দ্বীন, দুনিয়া ও পরিণামের ক্ষেত্রে অথবা আমার তাৎক্ষণিক ও আপেক্ষিক ব্যাপারে অমঙ্গলজনক, তবে তা থেকে আমাকে বিরত রাখুন। আর নির্ধারণ করুন আমার জন্য যা কল্যাণকর হয় এবং সেটিতেই আমাকে সস্তুষ্ট রাখুন।’ (সহিহ বুখারি: ৬৮৮৬)

মূলত এভাবে বান্দা আল্লাহর কাছে কল্যাণ চায় এবং ক্ষতির দিক থেকে রক্ষা চায়। আর আল্লাহর সিদ্ধান্তই যেখানে চূড়ান্ত, সেখানে ভুল নেই, কল্যাণ ছাড়া অন্যকিছু নেই।

২. উদ্বেগ থেকে মুক্তি

আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা হয়ত কোনোকিছুকে অপছন্দ করো, অথচ তা তোমাদের জন্য ভালো, আর তোমরা হয়ত কোনোকিছুকে ভালোবাসো, অথচ তা তোমাদের জন্য মন্দ। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা: ২১৬)

ইস্তেখারা করার পর অন্তর এমন এক প্রশান্তি লাভ করে, যেখানে দ্বিধা-সংশয় কেটে যায় এবং কল্যাণময় পথ প্রশস্ত হয়।

আরও পড়ুন: মনের আশা পূরণের দোয়া

৩. তাওয়াক্কুলে প্রশান্তি লাভ

আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছে পূরণ করবেনই; অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্ৰা।।’ (সুরা তালাক: ৩)

ইস্তেখারা আমাদের অন্তরে এমন এক ঈমানি সাহস তৈরি করে, যা সব পরিস্থিতিতে আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে শেখায়। ফলে সর্বদা অন্তর থাকে প্রশান্ত।

৪. ঈমানের পূর্ণতা অর্জন

হাদিসে এসেছে, ‘ইস্তেখারা করা এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা হলো একজন মুমিনের সৌভাগ্যের নিদর্শন।’ (মুস্তাদরাক হাকিম: ১৮৭৪)

যে ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নিজেকে সোপর্দ করে দেয়, সে পোক্ত ঈমানের কারণে ইহজগতে ও পরকালে সফল হয়।

৫. আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়

নবীজি (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তবে সে যেন দুরাকাত নামাজ পড়ে ইস্তেখারার দোয়া করে।’ (সহিহ বুখারি: ১১৬৬)

ইস্তেখারার পর একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে আল্লাহ আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেন, বিপরীত দিকে বান্দাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করেন। যা বাস্তব জীবনে মুমিনকে সঠিক ও সুন্দর পথে চলতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে যা হারিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম কিছু পাবেন

ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম

ইস্তেখারা নামাজের পদ্ধতি হলো- প্রথমে পবিত্র হয়ে ইস্তেগফার করে দোয়া-দরুদ পাঠ করে নিজের যে সমস্যা আছে তা নিয়তে রেখে সুরা ফাতেহার সঙ্গে যেকোনো সুরা মিলিয়ে দুই রাকাত নামাজ ধীর-স্থিরভাবে আদায় করা এবং হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়া।

ইস্তেখারা নামাজের পর যে দোয়া পড়বেন

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ـ (أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ)ـ فَاقْدُرْهُ لِي، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ـ(أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ)ـ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি-আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আজিম, ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু আন্না হাজাল আমরা” (এখানে নিজের কাজের কথা মনে মনে উল্লেখ করবে) খাইরুন লি ফি- দ্বীনী ওয়া মা’আশি ওয়া আক্বিবাতি আমরি (অথবা বলবে: আ-জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি) ফাকদিরহু লি, ওয়া ইয়াসসিরহু লি, সুম্মা বা-রিকলি ফিহি, ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাজাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা মনে মনে উল্লেখ করবে) শাররুন লি ফি দ্বীনী ওয়া মা’আশি ওয়া আক্বিবাতি আমরি (অথবা বলবে: আ-জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি) ফাসরিফহু আন্নি ওয়াসরিফনি আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা রাদ্দিনি বিহি।’ (এরপর নিজের কাজের কথা উল্লেখ করে দোয়া করবে)।

দোয়ার অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতাবান; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ, আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (এখানে নিজের প্রয়োজনের নাম উল্লেখ করবে অথবা মনে মনে স্মরণ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য (কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে) কল্যাণকর হলে, আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন। হে আল্লাহ, আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে (কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।’ (সহিহ বুখারি: ৬৮৪১, তিরমিজি: ৬৪৮)

স্বপ্নে কিছু দেখলে বা না দেখলে করণীয়

আসলে ইস্তেখারার জন্য স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়। মনে উদয় হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ইস্তেখারার মাধ্যমে শুধুই স্বপ্নে সমাধান বুঝা যাবে বিষয়টি এমন নয়। মূল বিষয় হলো- ইস্তেখারা শেষে ঘুমানোর পর জাগ্রত হয়ে মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে। (তুহফাতুল আলমায়ি: ২/৩৩৮, বেহেশতি জেওর)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর