ইবাদত ও মানবিকতায় একাকার হোক ঈদের দিনগুলো
ঈদ শুধু আনন্দ বা খাওয়া-দাওয়ার দিন নয়, বরং এটি এক আত্মিক প্রশান্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপলক্ষ। ঈদের ছুটির দিনগুলোয় একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা। তাই সময়কে সার্থক করে তোলার জন্য কিছু আমল বিশেষভাবে গুরুত্ব রাখে। নিচে এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো তুলে ধরা হলো।
বিজ্ঞাপন
১. নিয়মিত নামাজ ও কোরআন তিলাওয়াত
ঈদের ছুটিতে অনেকে ঘুম বা ভ্রমণে সময় কাটিয়ে দেন, কিন্তু এ সময়টায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়ার চেষ্টা করা উচিত। পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু সময় কোরআন তিলাওয়াত করা এবং তার অর্থ বোঝার চেষ্টা করা উচিত। রাসুল (স.) বলেন- ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (বুখারি: ৫০২৭)
২. বাবা-মা ও পরিবারের সেবা
ছুটির দিন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুবর্ণ সুযোগ। বিশেষ করে মা-বাবার খেদমতে এগিয়ে আসা উচিত। তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, প্রয়োজনীয় কাজে সহায়তা করাও ইবাদত। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা তোমাদের মা-বাবার সাথে উত্তম ব্যবহার করো।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: বিবাহিত নারী মা-বাবার সেবা করবে যেভাবে
৩. গরিব-দুঃখীদের খোঁজ রাখা ও সহায়তা করা
ঈদের আনন্দ শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা নয়; বরং সমাজের গরিব, এতিম ও অসহায় মানুষদের সঙ্গে ভাগাভাগি করাও ঈমানদারের কাজ। তাদের পাশে দাঁড়ানো, উপহার বা খাবার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (স.) বলেন, ‘সে মুমিন নয়, যে নিজে পেট ভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ, আদাবুল মুফরাদ: ১১২)
৪. সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা ও মাফ করে দেওয়া
ঈদের ছুটি পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা গড়ার সময়। পূর্বের বিরোধ বা মনোমালিন্য থাকলে তা মাফ করে দেওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি ক্ষমা করো, উপেক্ষা করো এবং মার্জনা করো—তবে আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা তাগাবুন: ১৪)
আরও পড়ুন: যে ৪ গুণ থাকলে হারানোর কিছু নেই
৫. তাওবা ও ইস্তেগফার
ছুটির এই অবসরে নিজের গুনাহের হিসাব করে তাওবা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া উচিত, যেমন সংক্ষিপ্তভাবে এটা পড়া যায়- أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ (আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি) রাসুল (স.) বলেন, ‘আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারের বেশি ইস্তেগফার করি।’ (বুখারি: ৬৩০৭)
৬. সুন্নত ও নফল আমলের প্রতি যত্ন নেওয়া
ঈদের দিন এবং এর পরেও সুন্নত ও নফল রোজা (যেমন—আরাফা, আশুরা, সোম-বৃহস্পতিবার) তাহাজ্জুদ নামাজের অভ্যাস গড়ে তোলা, জিকির-আজকারের মাধ্যমে দিন শুরু ও শেষ করা প্রত্যেক মুমিনের উচিত।
আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া
৭. উপকারী বই পড়া ও জ্ঞান চর্চা
ছুটিতে সময় ব্যয় করা যেতে পারে ইসলামি বই, হাদিস, সিরাত গ্রন্থ বা আত্মউন্নয়নমূলক বই পড়ে। এটি চিন্তা ও আত্মশুদ্ধিতে সহায়ক হবে।
শেষ কথা, ঈদের ছুটি যেন শুধু আরাম-আয়েশেই শেষ না হয়; বরং সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের আত্মা ও আমলকে সুসজ্জিত করতে পারি। সময়ের সদ্ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন, কারণ ছুটির দিনগুলোও কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসার আওতায় আসবে।
আল্লাহ তাওফিক দিন যেন আমরা ঈদের ছুটিকে ইবাদত, সম্পর্ক উন্নয়ন ও মানবিক সহানুভূতির মাধ্যমে বরকতময় করে তুলতে পারি। আমিন।

