প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়, ঝঞ্ঝা বা প্রবল বাতাস মানুষের জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ। ইসলামে এমন সময় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা এবং প্রিয়নবী (স.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নবীজির আমল ও দোয়া
নবীজি (স.) ঝড়-বাতাস বা ঝঞ্ঝার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া ও আশ্রয় চাইতেন। তিনি দোয়া করতেন- اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-ফিহা ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহি। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এই ঝড়ের কল্যাণ, এর মধ্যস্থিত কল্যাণ, এর সঙ্গে প্রেরিত কল্যাণ। আমি আপনার নিকট পানাহ চাই এই ঝড়ের অনিষ্ট থেকে, এর মধ্যস্থিত অনিষ্ট থেকে, এর সঙ্গে প্রেরিত অনিষ্ট থেকে। (বুখারি: ৩২০৬; মুসলিম: ৮৯৯; তিরমিজি: ৩৪৪৯)
বৃষ্টিপাত বেশি হলে সময় মহানবী (স.) এই দোয়া পড়তেন— اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا ولَا عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ علَى الآكَامِ والظِّرَابِ، وبُطُونِ الأوْدِيَةِ، ومَنَابِتِ الشَّجَرِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।’ (বুখারি: ১০১৪)
আরও পড়ুন: দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইসলামি নির্দেশনা
বজ্রপাত ও বিজলি চমকানোর সময় রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া পড়তেন— اللَّهُمَّ لاَ تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلاَ تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা বিগাজাবিকা, ওয়া লা-তুহলিকনা বিআজা-বিকা; ওয়া আ-ফিনা-ক্বাবলা জা-লিকা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! গজব দিয়ে আমাদের নিঃশেষ করবেন না, আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করবেন না; এর পূর্বেই আমাদের ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি: ৩৪৫০; নাসায়ি: ৯২৭)
বিজ্ঞাপন
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২৯২১৩)
ঝড়বৃষ্টিতে করণীয় ও সতর্কতা
বিপদকালে সঠিক স্থানে আশ্রয় নেওয়া এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করা সুন্নত।
মহানবী (স.) ঝড়ের সময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা ও দোয়া করতেন এবং ধৈর্য ধারণ করতেন।
ঝড়ের সময় আতঙ্কিত না হয়ে তিনি বিশ্বাস ও ধৈর্য্য রাখার শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা (তাওয়াক্কুল) নবীজির সুন্নাহ।
আরও পড়ুন: দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ফজিলত
নবীজির আমল থেকে মুমিনের শিক্ষা
নবীজির (স.) আমল আমাদের শেখায়, বিপদ ও দুর্যোগের সময় আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া, তাঁর সাহায্য কামনা করা এবং আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ও বিশ্বাস ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ঝড়-বাতাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নবীজি মুহাম্মদ (স.) যে আমল করতেন তা অনুসরণ করে আমরা আমাদের নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে পারি। দোয়া, তাওয়াক্কুল ও সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা আল্লাহর করুণা ও সুরক্ষা কামনা করতে পারি।

