বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের মতো মসিবতের কাছে মানুষ অসহায়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত বা চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন, আবার কেউ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। এমন অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা একদিকে শ্রেষ্ঠতম ইবাদত অন্যদিকে ঈমানি দায়িত্ব।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। (সুরা হুজরাত: ১০) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না...।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যে আমলের মর্যাদা জান্নাতের ফলবাগানে অবস্থানের মতো
দুর্গত মানুষের সহযোগিতায় ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল থেকে শুরু করে মসজিদের খতিব, মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, আলেম-ওলামা সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়া এবং অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করা উচিত। এই মানবিক কাজটি নবীজির পবিত্র সুন্নত। আর সুন্নত রক্ষণাবেক্ষণকারীর ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের পরে এমন একটা কঠিন সময় আসছে, যখন কোনো সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী ব্যক্তি তোমাদের মধ্যকার ৫০ জন শহিদের সমান নেকি পাবে।’ (তাবারানি কাবির: ১০২৪০; সহিহুল জামে: ২২৩৪)
সহযোগিতা করার সামর্থ্য নেই—এই কষ্টে হতাশ হয়ে বসে থাকা উচিত নয়। সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিলে কিছু না কিছু অবশ্যই করা যায়। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষেরই এই মহান কাজে এগিয়ে আসা উচিত। এতে করে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের দায়িত্ব যেমন পালন হবে; আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহও লাভ হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত ইহসানকারীদের (অনুগ্রহশীল) নিকটবর্তী।’ (সুরা আরাফ: ৫৬) হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বান্দার সহযোগিতায় থাকেন ততক্ষণ, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে। (মুসলিম: ২৬৯৯)
অন্য হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা দয়ালুদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনে যারা বসবাস করছে তাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ: ৪৯৪১)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যে আমল করলে জাহান্নামে যেতে হবে না
আল্লাহ তাআলা এক মসিবত দিয়ে সবাইকে পরীক্ষা করেন। দুর্গতদের যেমন ধৈর্য ও ঈমানের পরীক্ষা করা হয়, একইভাবে যারা দুর্যোগে পতিত হয় না, তাদেরও পরীক্ষা নেওয়া হয়। যারা অসহায়দের অসহায়ত্ব দেখেও মুখ ফিরেয়ে নেবে পরকালে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার আগেই যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৫৪)
আর বিপদে পতিতদের উচিত- ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহকে ভয় করা ও তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৬-১৫৭)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ তৈরি করে দেন।’ (সুরা তালাক: ০২) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর দুর্গত মানুষগুলোকে সবরের তাওফিক দান করুন। অন্যান্যদের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

