মানুষের অন্তরে লুকিয়ে থাকা অদৃশ্য এক মহাবিপদের নাম গোপন শিরক। বাহ্যিকভাবে প্রকাশ না পেলেও এই শিরক মানুষের ইবাদতকে ধ্বংস করে দেয় এবং আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। অনেক সময় মানুষ বুঝতেও পারে না যে, তার কোনো কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং মানুষের প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে হচ্ছে। গোপন শিরকের এমন বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকা ও তা থেকে মুক্ত থাকার উপায় জানা প্রতিটি মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
গোপন শিরক কাকে বলে?
গোপন শিরক হলো এমন শিরক যা বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত হয় না বরং মানুষের অন্তরে লুকিয়ে থাকে। এটি মূলত রিয়া বা লোক দেখানোর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। যেমন, নামাজ, দান বা সৎকর্ম করা শুধুমাত্র মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে। উম্মতের মধ্যে এই শিরক বেড়ে যাওয়া নিয়ে নবীজি দুশ্চিন্তা করতেন।
আরও পড়ুন: উম্মতের জন্য ভবিষ্যতের ৬ ফেতনা নিয়ে নবীজির দুশ্চিন্তা
গোপন শিরক সম্পর্কে নবীজি কী বলেছেন?
গোপন শিরক সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘..আমি কি তোমাদেরকে এমন বস্তু সম্পর্কে সংবাদ দেবো, যা তোমাদের জন্য দাজ্জালের চেয়েও অধিক ভয়ঙ্কর। (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি (স.) বললেন, গোপন শিরক। যেমন, কোনো ব্যক্তি নামাজ পড়ছিলো, অতঃপর কেউ তাকে দেখছে বলে সে নামাজকে খুব সুন্দর করে পড়তে শুরু করল।’ (ইবনু মাজাহ: ৪২৭৯; আহমদ: ৩/৩০; হাকিম: ৪/৩২৯; মেশকাত: ৫৩৩৩)
বিজ্ঞাপন
গোপন শিরক নেকি নষ্ট করে
হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাদের (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেওয়া হবে তোমরা তাদের কাছে যাও যাদের তোমরা দুনিয়ায় দেখাতে, দেখো তাদের কাছে কোনো প্রতিদান পাও কি না। ’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৬৩৬)
আরও পড়ুন: ১২ শ্রেণির মানুষকে ‘উম্মত নয়’ বলেছেন নবীজি
গোপন শিরক থেকে বাঁচার উপায়
১. ইখলাস (একনিষ্ঠতা ও খাঁটি আনুগত্য) ঠিক রাখা: প্রতিটি ইবাদতের আগে নিয়ত বিশুদ্ধ করতে হবে এবং ইবাদত করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কারো প্রশংসা বা স্বীকৃতির জন্য নয়।
২️. আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস: সব ধরনের প্রশংসা ও পুরস্কারের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাই কাজের প্রতিদান মানুষের কাছ থেকে নয়, বরং আল্লাহর কাছ থেকে প্রত্যাশা করতে হবে।
৩️. দোয়া ও ইস্তিগফার করা: নিয়মিত আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে যেন তিনি আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ রাখেন এবং শিরক থেকে হেফাজত করেন। এক্ষেত্রে এই দোয়াটি পড়ুন- ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أشْرِكَ بِكَ وَاَنَا أَعْلَمُ وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন-উশরিকা বিকা, ওয়া আনা আ’লামু; ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আ’লামু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি সজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৭২১)
৪️. রিয়া বা লোক দেখানো থেকে সতর্ক থাকা: কারো সামনে ভালো কাজ করার সময় নিজের নিয়তকে খতিয়ে দেখা জরুরি। এই কাজটি কি আল্লাহর জন্য, নাকি মানুষের জন্য?
৫️. নিজেকে অহংকারমুক্ত রাখা: ইবাদত বা নেক কাজ করার পর অহংকারবশত নিজের প্রশংসা করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
৬️. নেক কাজ গোপনে করা: সম্ভব হলে নেক কাজগুলো গোপনে করা উত্তম, যেন রিয়ার কোনো সুযোগ না থাকে।
৭️. শিরকের জ্ঞান অর্জন ও সচেতনতা: গোপন শিরকের ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করা এবং এ বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি, যেন তা অন্তরে প্রবেশ করতে না পারে।
গোপন শিরক এমন একটি অদৃশ্য ফিতনা যা মানুষের অন্তরে লুকিয়ে থেকে ইবাদতকে নষ্ট করে দেয়। তাই সচেতনভাবে ইবাদত করা, নিয়ত বিশুদ্ধ রাখা এবং আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা করাই মুমিনের জন্য পরকালীন মুক্তির উপায়।

