বান্দার দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দিতে পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন: ৬০) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৩২০)
আসলে বান্দার কোনো দোয়া বিফলে যায় না। কোনো দোয়া দ্রুত কবুল হয়, আর কোনো দোয়া বিলম্বে কবুল হয়। অথবা কোনো দোয়ার কারণে এমন কিছু দেওয়া হয়, যা বান্দার প্রার্থিত বিষয়ের চেয়েও উত্তম। আবার কিছু দোয়ার ফল আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে না দিয়ে পরকালের জন্য রেখে দেন। অর্থাৎ বান্দার জন্য উপযুক্ত ও কল্যাণকর বিষয়টি আল্লাহ দান করেন।
বিজ্ঞাপন
হাদিস শরিফে আছে, ‘যখন কোনো মুসলমান দোয়া করে, যদি তার দোয়ায় গুনাহের কাজ কিংবা সম্পর্কচ্ছেদের আবেদন না থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তিনটি প্রতিদানের যেকোনো একটি অবশ্যই দান করেন। সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কবুল করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস দিয়ে দেন। দোয়ার কারণে কোনো অকল্যাণ বা বিপদ থেকে হেফাজত করেন অথবা আখিরাতের কল্যাণের জন্য তা জমা করে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১১৪৯)
আরও পড়ুন: সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট দোয়া
তাই দোয়া দ্রুত কবুল না হলে হতাশ হওয়া অনুচিত। বরং সন্তুষ্টি ও শুকরিয়ার সাথে এই আশা করতে হবে যে, দোয়ার কারণে দয়াময় আল্লাহ যথাযসময়ে যথোপযুক্ত পুরস্কারটি অবশ্যই দেবেন। আসলে আল্লাহ তাআলা সঙ্গেসঙ্গে কিছু দিলে সেটা যেমন হেকমতপূর্ণ, আবার সঙ্গেসঙ্গে না দিলে বা বঞ্চিত রাখলে তাও প্রজ্ঞাপূর্ণ। সুতরাং আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই তোমরা এমন বহু কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর অবশ্যই এমন বহু কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সব কিছু জানেন; কিন্তু তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা: ২১৬)
এরপরও যদি দোয়া কবুল হচ্ছে না বলে হতাশা চলে আসে, তখন ইস্তেগফার করবেন। পাশাপাশি দোয়া চালিয়ে যাবেন। যতবার দোয়া করবেন, ততবার আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। দোয়া থেকে কোনো অবস্থায় গাফেল হওয়া উচিত নয়। বরং দোয়াকে সঙ্গি বানানো উচিত।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন হাদিসে উম্মতকে বেশি বেশি দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন নবীজি। এক হাদিসে প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘তাকদিরের বিরুদ্ধে সতর্কতা কোনো কাজেই আসবে না। যা ঘটেছে ও যা ঘটতে পারে—তা থেকে শুধু দোয়াই পারে নিষ্কৃতি দিতে। কোনো কোনো দুর্দশার সঙ্গে মোকাবেলা করে বিচার দিন পর্যন্ত লড়াই করতে থাকে দোয়া।’ (তাবরানি আউসাত: ১৫১৯)
আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া
সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, বান্দাকে না দেওয়াটাও একটা দান। এটা এজন্য যে তিনি তাকে কৃপণতা ও অন্য খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন। মূলত, তিনি বান্দার কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখেন। অতঃপর তাকে না দেওয়াটাও কল্যাণকর বিষয়।’ (মাদারিজুস সালিকিন, পৃষ্ঠা-২/২১৫)
তবে, কখনও নিজের ভুলের কারণে দোয়া কবুল হয় না। চিন্তা করতে হবে ভুলটা কী। যদি উপার্জন হারাম হয়, তাহলে তাওবা ইস্তেগফারের সাথে তা থেকে সরে আসা কর্তব্য। কোনো পাপাচারে জড়িত থাকলে দ্রুত তাওবা করে ওই পাপ থেকে ফিরে আসুন। আর আল্লাহকে ভয় করুন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বস্তুত যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কর্ম সহজ করে দেন।’ (সুরা তাহরিম: ৪)
আবার কখনও মনোযোগহীনতা বা তাড়াহুড়ার কারণেও দোয়া কবুল হয় না। সেরকম কিছু হলে আপনাকে অবশ্যই বিনয়ের সঙ্গে দোয়া কবুলের আশা নিয়ে বারবার দোয়া করতে হবে।
এছাড়াও দোয়ার আগে আল্লাহর গুণগান ও দরুদ পড়বেন। যা দোয়া কবুলে সহায়ক। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার দোয়া কবুল করুন। দোয়া কবুলের প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে অনুনয় বিনয়ের সাথে মহান প্রভুর কাছে বারবার প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।