ইসলামে যতক্ষণ কোনো ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণ হবে না, ততক্ষণ তাকে অপরাধী বলা যাবে না। আর প্রমাণবিহীন শাস্তি দেওয়া তো মহা অন্যায়। এ বিষয়ে নবীজি উম্মতকে সতর্ক করে বলেন, ‘যার জিনিস চুরি হয়, সে ধারণা ও অনুমান করতে করতে চোরের চেয়েও অগ্রসর হয়ে যায়।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ: ১৩০১)
ইসলামে কাউকে প্রমাণ ছাড়া শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা, সন্দেহ করাটাই অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ। (সুরা হুজরাত: ১২)
বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মন্দ ধারণা থেকে তোমরা দূরে থাকো। কেননা, মন্দ ধারণা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’ (তিরমিজি: ১৯৮৮) রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন- ‘সব শোনা কথা প্রচার করা ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ: ৪৯৯২)
অতএব, প্রমাণের আগে কাউকে অপরাধী বলা যাবে না এবং এ বিষয়ে কাউকে পাকড়াও করা যাবে না। এমনকি সন্দেহও করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সতর্ক করে বলেন, হে ঈমানদারগণ, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো কওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা হুজরাত: ৬)
আরও পড়ুন: ভারত ও ফিলিস্তিনের মজলুমদের জন্য ৬ দোয়া
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তরের প্রতিটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩৬)
বিজ্ঞাপন
যদি কেউ প্রমাণ ছাড়া কাউকে দোষারোপ করে এবং ওই অপরাধটি বাস্তবে সে না করে থাকে, তাহলে তা হবে অপবাদ। মিথ্যার সর্বোচ্চ পর্যায় এটি। এর মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তির চরিত্রে সাময়িক কালিমা লেপন করা গেলেও পরিণতি ভয়াবহ। সচ্চরিত্রবান নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) আছে মহা শাস্তি।’ (সুরা নুর: ২৩) এ বিষয়ে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছ; অথচ তা আল্লাহর কাছে গুরুতর অপরাধ।’ (সুরা নুর: ১৫)
অতএব কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করা কিংবা শাস্তি দেয়ার আগে প্রমাণ লাগবে। অপরাধ প্রমাণ করার জন্য সাক্ষী লাগবে। কোনোক্ষেত্রে এক, দুই বা তিনজন সাক্ষী নির্ধারণ করেছে ইসলাম। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে চারজন সাক্ষীর শর্তরোপ করা হয়েছে। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হতে চারজন সাক্ষী তলব করো।’ (সুরা নিসা: ১৫)
অপবাদ দেওয়া হয় কাউকে হেয় করার জন্য; মানুষের কাছে তার চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে। অথচ হাদিস অনুযায়ী, প্রকৃত মন্দলোক হচ্ছে অপবাদকারী নিজে। রাসুল (স.) বলেন, ‘একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। ’ (মুসলিম: ৬৪৩৫)
আরও পড়ুন: অন্যায়ের প্রতিবাদ না করার ক্ষতি, কোরআন হাদিস
কারও ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া হলে সে ক্ষমা না করলে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে না। কেননা অপবাদ বান্দার হক। তাই জীবনে কাউকে গালি দিয়ে থাকলে, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে থাকলে, অন্যায়ভাবে প্রহার, রক্তপাত করে থাকলে তাদের কাছ থেকে ক্ষমা নেওয়া জরুরি। তা না হলে অত্যাচারিতদের গুনাহগুলো তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। হাদিসে ওই ব্যক্তিকে মুফলেস বা নিঃস্ব বলা হয়েছে। (মুসলিম: ২৫৮১, তিরমিজি: ২৪১৮,২৪১৯; আহমদ: ৭৯৬৯, ৮২০৯)
অপবাদকারীকে শাস্তির আওতায় আনতে বলে ইসলাম। অপবাদের শাস্তি দুই রকম। ১. কিছু অপবাদের শাস্তি নির্দিষ্ট পরিমাণ ২. কিছু অপবাদের শাস্তি শিক্ষামূলক। তবে, অপবাদকারীকে ভুক্তভোগী ক্ষমা করে দিলে বা অপবাদকারী নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিজেকে লানত করলে শাস্তি দিতে হবে না। অবশ্য বিষয়টি ইসলামি হুকুমাতের আদালত ঠিক করে দেবে।
মূল কথা হলো- কারো অপরাধের ব্যাপারে সন্দেহ হলেই হুটহাট সিদ্ধান্ত কিংবা আতঙ্ক না ছড়িয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা মুসলিমদের দায়িত্ব। কর্তৃপক্ষই তদন্ত করবে বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। নিজের অজান্তে যেন নিজের ও মানুষের ক্ষতি না করি সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

