রমজানের রোজা ইসলামের অন্যতম রুকন ও ফরজ ইবাদত। রমজানের রোজার ফজিলত অনেক বেশি। স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই রোজাদারকে পুরস্কার দিয়ে ধন্য করবেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন— ‘নিশ্চয়ই রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব।’ (মুসলিম: ১১৫১/১৬৫)।
রোজাদারের আরও অনেক মর্যাদা ও পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এক হাদিসে রোজা পালনকারীকে ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। (বুখারি: ১৮৮৭) আরও বলা হয়েছে, ‘রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধিময়।’ (বুখারি: ১৯০৪, মুসলিম: ২৭৬২) আল্লাহর রাসুল (স.) আরও ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে রাখবেন।’ (বুখারি: ২৮৪০; মুসলিম: ১১৫৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: আল্লাহর কাছে রোজাদারের মর্যাদা
রোজাদারের এত মর্যাদার মূল কারণ হলো- রোজাদার শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কষ্টকে স্বীকার করে নেয়। আল্লাহর আদেশ মেনে সারাদিন না খেয়ে থাকা—এটা আল্লাহ তাআলার অনেক পছন্দের। মূল কথা- আল্লাহর জন্য বেশি কষ্ট করা আমলগুলোর মর্যাদা বেশি। কষ্ট যত বেশি ততই আমলটি মর্যাদাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সেই হিসেবে গরমের কারণে রোজাদারের সওয়াব বাড়ানো হবে ইনশাআল্লাহ। কষ্টের কারণে সওয়াব বেশি হয়—এর অনেক দলিল রয়েছে। যেমনটি রাসুলুল্লাহ (স.) ওমরা আদায়ের ক্ষেত্রে উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমার কষ্ট ও খরচ অনুযায়ী তোমাকে সওয়াব দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ১৭৮৭; মুসলিম: ১২১১)
কারও বাড়ি যদি মসজিদ থেকে দূরে হয়, সে জামাতে নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে তার কষ্ট অনুযায়ী বেশি সওয়াব লাভ হবে। নবী করিম (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে অজু করে আল্লাহর কোনো ঘরের দিকে এই উদ্দেশ্যে যাত্রা করে যে আল্লাহর নির্ধারিত কোনো ফরজ ইবাদত (সালাত) আদায় করবে, তাহলে তার প্রতি দুই পদক্ষেপের মধ্যে একটিতে একটি করে গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং অন্যটিতে একটি করে মর্যাদা উন্নত করা হবে। (মুসলিম: ১৪০৭)
বিজ্ঞাপন
একইভাবে কোরআন তেলাওয়াত কষ্টসাধ্য হওয়ার পরও যে তা পড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখে তার জন্য তার দ্বিগুণ সওয়াবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নবীজি বলেছেন, ‘যারা সহি শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন সহি শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (আবু দাউদ: ১৪৫৮)
আরও পড়ুন: রমজানে যেসব গুনাহ ভুলেও করবেন না
হাদিসে দেখা যাচ্ছে, কষ্টের কারণে সওয়াবের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। যেমন- মক্কা বা মক্কার আশেপাশে অবস্থানকারীদের চেয়ে যারা দূর-দূরান্ত থেকে বহু পথ পাড়ি দিয়ে, বহু কষ্ট করে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে হজ করতে আসে— তাদের সওয়াব বেশি; এতে কোনও সন্দেহ নেই।
অর্থাৎ এ কথা প্রমাণিত যে, আল্লাহর নির্দেশ পালনে যদি কারও বেশি কষ্ট-ক্লান্তি ও পরিশ্রম হয় এবং এতে তিনি সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করেন, তাহলে সাধারণ আমলকারীর চেয়ে তার সওয়াবের পরিমাণ বেশি হয়।
সুতরাং গরমের দিনের কষ্টসাধ্য রোজায় সওয়াব বেশি পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গরমে ধৈর্য ধরার তাওফিক দিন। প্রকৃত রোজাদার হিসেবে কবুল করুন। রোজার পূর্ণ ফজিলত দান করুন। আমিন।