ঈদ অর্থ আনন্দ বা উৎসব। ফিতর অর্থ ভাঙা বা খোলা। ঈদুল ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা বা খোলার আনন্দ। দীর্ঘ এক মাস রোজা রেখে ঈদুল ফিতরের দিন ফজর থেকে রোজা খোলার আনন্দ পেতেই ইসলাম ঈদুল ফিতরের ব্যবস্থা করেছে। যেমনটি রাসুল (স.) ঘোষণা করেছেন, সিয়াম পালনকারীদের জন্য দুটি আনন্দ আছে। এর মাধ্যমে সে অনাবিল আনন্দ লাভ করে। একটি হলো যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারির মাধ্যমে আনন্দ পায় (ঈদের মাধ্যমেও) আর দ্বিতীয়টি হলো যখন সে তার প্রভুর সঙ্গে মিলিত হবে তখন সে তার সিয়ামের জন্য আনন্দিত হবে। (মুসলিম: ২৫৯৬)
ঈদুল ফিতর তথা রোজা ভাঙার আনন্দের দিন রোজা রাখা হারাম। কারণ এই দিনে সবাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মেহমান হয়ে থাকে। এদিনে রোজা রাখার অর্থ হলো, আল্লাহর মেহমানদারি গ্রহণ করতে অস্বীকার করা। এজন্য নবীজি (স.) বলেন, এদিন কোনো রোজা নেই। (বুখারি: ১৮৬৪)
বিজ্ঞাপন
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ঈদের দিন ফেরেশতাদের মধ্যে রোজাদারদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, ‘হে ফেরেশতারা, আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হতে পারে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘হে প্রভু, পূর্ণরূপে পুরস্কার দান করাই তো তার প্রতিদান।’ আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব (রোজা) পালন করেছে। অতঃপর দোয়া করতে করতে ঈদগাহে গমন করেছে। সুতরাং আমার মর্যাদা, সম্মান, দয়া ও বড়ত্বের কসম, আমি তাদের দোয়া কবুল করব এবং তাদের মাফ করে দেব।’ (শুয়াবুল ঈমান: ৩৭১৭; মেশকাত: ২০৯৬)
তবে মনে রাখতে হবে, ইসলাম অন্য ধর্মের মতো শুধু অনুষ্ঠানসর্বস্ব কোনো ধর্ম নয়। এর প্রতিটি বিধানে অন্তর্নিহিত রয়েছে ইবাদতের স্বাদ। ঈদও মুসলিম উম্মাহর জন্য এমন একটি ইবাদতের নিয়ামত। এই দিনে নবীজির সুন্নতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া বাঞ্ছনীয়। ঈদের দিনের সুন্নতগুলো হলো- ১. ঈদের রাতে ইবাদত করা। ২. মেসওয়াক করা। ৩.গোসল করা। ৪. শরিয়তসম্মত সাজসজ্জা করা। ৫. সামর্থ অনুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করা। ৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টিজাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। ৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। ৯. ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। ১০.পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। ১১. ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। ১২.যে রাস্তায় ঈদগাতে যাবে, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। ১৩. ঈদের দিনে তাকবির দেওয়া। ১৪. শুভেচ্ছা বিনিময় করা ইত্যাদি।
বিজ্ঞাপন
দুঃখের বিষয় হলো, ইদানীং ঈদের মতো মহিমান্বিত উৎসবে বিভিন্ন কুপ্রথার অনুপ্রবেশ ঘটছে। ঈদকে যদি আমরা সত্যিকার অর্থে ইবাদত হিসেবে পালন করতে চাই তাহলে আমাদের কোরআন-হাদিসের বিধি-নিষেধ মেনেই এই ইবাদত পালন করার প্রতি ব্রতী হতে হবে। অন্যথায় এটি আমাদের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। কুপ্রথার চাদরে ঢাকা গুনাহময় ঈদ কারো গুনাহ মাফ করাতে পারবে না, কারো মর্যাদা বৃদ্ধি করবে না। উপরন্তু তা হবে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।
তাই আসুন, আমরা ঈদের পবিত্রতা বজায় রাখি। ঈদকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সব ধরনের গুনাহ থেকে নিজেদের বিরত রাখি এবং যথাসম্ভব সুন্নতগুলো মেনে চলি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।