শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

বদর যুদ্ধে মুসলমানদের তলোয়ার ও ঘোড়ার সংখ্যা জানেন?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। দ্বিতীয় হিজরিতে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে ১৭ রমজান বদর প্রান্তরে এক অসম যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে। মুসলমানদের সমৃদ্ধি ও শক্তিবৃদ্ধিতে ঈর্ষা ও শত্রুতা থেকেই পৌত্তলিক মক্কাবাসী রাসুলুল্লাহ (স.) ও তাঁর অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়। আল্লাহ তাআলার গায়েবি সাহায্যে মুসলিম বাহিনি মুশরিক-কাফিরদের বিশাল বাহিনীকে পর্যুদস্ত করেছিলেন।

ইসলামের ইতিহাসে তা ’গাজওয়ায়ে বদর’ বা বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধকে পবিত্র কোরআনে ‘সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বদর যুদ্ধে মুসলিম ও কাফিরদের সৈন্যসংখ্যা ও সমরাস্ত্রে বিরাট পার্থক্য ছিল। ইসলামের ইতিহাস ও সিরাতগ্রন্থে এ নিয়ে বিভিন্ন মত দেখা গেলেও বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী দুই দলের তুলনামূলক পার্থক্য ছিল নিম্নরূপ।


বিজ্ঞাপন


বদর যুদ্ধে মুশরিক নেতা আবু জেহেলের ১০০০ সুসজ্জিত বাহিনীর বিপরীতে মুসলমানদের সেনা সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩। তন্মধ্যে মুহাজির ছিলেন ৮২ জন, বাকি সবাই আনসার। 
মুসলিমদের তলোয়ার সংখ্যা ৮টি আর কাফির সৈন্যদের তলোয়ার সংখ্যা ছিল ৬০০টি।
এই যুদ্ধে মুসলমানদের ছিল মাত্র ২টি ঘোড়া ও ৭০টি উট। অন্যদিকে কাফিরদের ছিল ২০০ ঘোড়া ও ৭০০ উট।

আরও পড়ুন: আবু জাহেলকে যেভাবে হত্যা করেছিল দুই কিশোর

এত বড় পার্থক্য থাকলে সাধারণত কোনো দল যুদ্ধে জড়ায় না, বরং পরাজয় মেনে নেয় কিংবা সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধ এড়াতে বাধ্য হয়। কিন্তু মুসলিমরা ছিলেন ঈমানী শক্তিতে বলিয়ান। আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস ও নির্ভরশীল হয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। যুদ্ধের প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন— হে আল্লাহ! যদি আজ এই দলটি (মুসলিম বাহিনী) পরাজিত হয়, তবে পৃথিবীতে তোমার ইবাদত করার আর কেউ থাকবে না! (মুসলিম: ১৭৬৩) 

এই দোয়ার পর আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে মুসলমানদের সাহায্য করেন। কোরআনে বিষয়টি এভাবে এসেছে— ‘যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তখন তিনি তোমাদের দোয়া কবুল করেছিলেন, বলেছিলেন, আমি এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করব, যারা পর্যায়ক্রমে আসবে। (সূরা আনফাল: ৯)


বিজ্ঞাপন


বদর যুদ্ধের অবস্থা তুলে ধরে মহান আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন। অথচ তোমরা ক্ষীণশক্তি।’ (সুরা আলে ইমরান: ১২৩)

এই যুদ্ধে ৭০ জন মুশরিক নিহত ও ৭০ জন বন্দি হয়। অন্যদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম বীর সেনানী শাহাদতের অমীয় সুধা পান করেন, কোনো বন্দি নেই। 

আরও পড়ুন: বদরযুদ্ধে অংশ নেওয়া সাহাবিদের অনন্য মর্যাদা

বদরের এ ঘটনা থেকে মুসলিম জাতীর সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো—মুসলিম উম্মাহ এমন একটি জাতি, যে নীরবে নিভৃতে অত্যাচার-অনাচার-জুলুম সহ্য করবে না। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাকে কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করবে। 

ইসলামকে সমুন্নত রাখার জন্য কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করবে। বদর যুদ্ধ মুসলমানকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে শেখায়। আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও নির্ভর হওয়া শেখায়। যুদ্ধে অবিচল থাকা ও সবর করা শেখায়।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা ইসলামবিদ্বেষীদের জুলুমের শিকার হচ্ছেন এবং ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর মুসলমানরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নীরবে বসে আছেন। তা মোটেও ইসলামের শিক্ষা নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বদরের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন