মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

ফজরের আগে নিয়ত না করলে রোজা হবে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ফজরের আগে নিয়ত না করলে রোজা হবে?

রোজা শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়ত শর্ত। অর্থাৎ নিয়ত না করলে রোজা হবে না। রোজার নিয়ত রাতে করাই উত্তম। সাহরি খাওয়ার আগে বা পরে নিয়ত করা যাবে। তবে ফজরের আগেই যেন নিয়ত করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, من لم يجمع الصيام قبل الفجر فلا صيام له অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না, তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না। (আবু দাউদ: ১/৩৩৩)

মূলত রোজার নিয়তের সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে। যেমন-মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত সোমবার দিবাগত রাত তথা সূর্যাস্তের পর থেকে করাই নিয়ম। আবার সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে মঙ্গলবারের রোজার নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। কেননা, হাদিসে রাতে নিয়ত করার কথা বলা হয়েছে। (আলমুহিতুল বুরহানি: ৩/৩৪৩; রদ্দুল মুখতার: ২/৩৭৭)


বিজ্ঞাপন


রমজান মাসে শুধু সাহরি খাওয়াকেই অনেকে রোজার নিয়ত বলে গণ্য করেছেন। এটি সঠিক নয়। সাহরির সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৮১)

আরও পড়ুন: সেহেরির সময় আছে ভেবে খেলে রোজা শুদ্ধ হবে?

সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার ঘণ্টা দেড়েক পূর্ব পর্যন্ত নিয়ত করা যাবে। তবে শর্ত হলো- সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়তের পূর্ব পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ না করতে হবে। (ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৫, রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৪১)

নিয়ত অর্থ- মনের ইচ্ছা, সঙ্কল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি অন্তরের কাজ, জিহ্বার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পোষণ করা হয়, সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। তাই কেউ মুখে উচ্চারণ না করলেও অন্তরে রোজার নিয়ত থাকলে তার রোজা আদায় হয়ে যাবে। (আল-বাহরুর রায়েক: ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ: ১/১৭৬; রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৫)


বিজ্ঞাপন


প্রত্যেক রোজার নিয়ত পৃথকভাবে করতে হবে। কেননা প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল। আর প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করা জরুরি। হাদিসমতে, ‘সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ বুখারি: ১/২; আলমুহাল্লা: ৪/২৮৫; মাবসুত, সারাখসি: ৩/৬০; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৫)

আরও পড়ুন: রমজানের যে ৩ সময় দোয়া করলেই কবুল

রোজার প্রচলিত নিয়তটি হলো— نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم উচ্চারণ: ‘নাওয়াইতু আন আছূমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী’। 

প্রসঙ্গত, নফল রোজার নিয়তের বিধান রমজানের রোজার মতোই। কিন্তু কাজা ও কাফফারার রোজার নিয়ত রাতেই করতে হয়। সুবহে সাদিকের পর কাজা কাফফারার রোজার নিয়ত করা যায় না। এ ছাড়া কেউ যদি অনির্দিষ্টভাবে যে কোনো দিন রোজা রাখার মানত করে, তাহলে ওই মানতের রোজার নিয়তও রাতে অর্থাৎ আগের দিন সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময় করা জরুরি।

কারো যদি একাধিক রমজানের রোজা কাজা হয়ে যায়, তাহলে কাজা আদায় করার সময় কোন রমজানের রোজার কাজা আদায় করছে এটা নির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হবে। তবে যদি কাজা রোজার সংখ্যা অনেক বেশি হয় এবং তা নির্দিষ্ট করা কঠিন হয় তাহলে ‘জীবনের সর্বপ্রথম কাজা রোজা রাখলাম’ এভাবেও নিয়ত করা যাবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার নিয়তের ব্যাপারে সংশয় দূর করুন এবং বিশুদ্ধ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর