শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

রমজান মাসে যে দোয়া বেশি পড়তেন নবীজি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজান নিয়ে নবীজির অমূল্য উপদেশ

মাহে রমজান সকল মাসের সেরা মাস। আরবিতে বলা হয় সাইয়িদুশ শুহুর। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানোর চেষ্টা থাকে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের। কারণ রোজাদারের অনন্য মর্যাদা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কর্তৃক স্বীকৃত। রমজানে রোজাদারের জীবনের গুনাহ ক্ষমা, নেক আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, জান্নাতে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণাসহ অসংখ্য ফজিলত রয়েছে।

এছাড়াও রমজানকে বলা দোয়া কবুলের মাস। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, 'অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রতিদিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৭৪৫০; মুসনাদে বাজ্জার: ৯৬২)


বিজ্ঞাপন


তাই মাহে রমজানে দোয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যধিক। প্রিয়নবীজির হাদিস থেকে জানা যায়, পবিত্র রমজানে কিছু দোয়ার বেশ গুরুত্ব ছিল নবীজির কাছে। তিনি রমজান মাস পাবার জন্যও দুই মাস ধরে দোয়া করতেন। নিচে পবিত্র রমজানে নবীজির দোয়াগুলো তুলে ধরা হলো।

১. রমজান মাস পাবার দোয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) রমজানের দুই মাস আগে থেকেই অর্থাৎ রজব থেকেই রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং এই দোয়া পড়তেন-اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্যে রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করুন।” (নাসায়ি: ৬৫৯; মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬, আলমুজামুল আওসাত: ৩৯৩৯)

২. রমজানের চাঁদ দেখে দোয়া
হজরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন এই দোয়া পড়তেন- اللَّهُمَّ أهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأمْنِ وَالإيمانِ، وَالسَّلاَمَةِ وَالإسْلاَمِ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত করো নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। হেদায়াত ও কল্যাণের চাঁদ। (সুনানে তিরমিজি: ১২২৮)

আরও পড়ুন: রমজানে যে আমলগুলো বিশেষ ফজিলতপূর্ণ


বিজ্ঞাপন


৩. পুরো রমজানজুড়ে নবীজির বিশেষ দোয়া
হজরত সালমান (রা.) বলেন, একবার নবী কারিম (স.) শাবান মাসের শেষদিন ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘তোমরা রমজান মাসে চারটি কাজ খুব বেশি করে করবে। দুটি কাজ দ্বারা তোমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। আর দুটি কাজ না করে তোমাদের রক্ষা নেই। যে দুটি কাজ দ্বারা তোমরা প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে পারবে তা হলো- তোমরা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিতে থাকবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। যে দুটি কাজ না করে তোমাদের রক্ষা নেই তা হলো- তোমরা জান্নাত প্রার্থনা করবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৮৮৭)

উপরোক্ত হাদিসের ভিত্তিতে চারটি দোয়া হলো—
১) أشهد أن لا إله إلا الله ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থ: আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই।
২) أستغفر الله ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে মাফ চাই।
৩) أسألك الجنة ‘আসআলুকাল জান্নাহ’ অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত চাই।
৪) أعوذ بك من النار ‘আউজু বিকা মিনান নার’ অর্থ: আমি তোমার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।

বিঃদ্র: এই দোয়ার বাক্যগুলো মিলিয়ে একত্রেও পড়া যাবে, আবার ইচ্ছে করলে আলাদা আলাদাও পড়া যাবে। 

৪. রোজার নিয়ত বা সেহেরির দোয়া
রোজার নিয়তকে অনেকে সেহেরির দোয়া বলেন। যদিও সেহেরির দোয়া বলতে কিছু নেই। রোজার জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। মনের ইচ্ছা বা সংকল্পকে নিয়ত বলে। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। (আল-বাহরুর রায়েক: ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ: ১/১৭৬; রদ্দুল মুখতার: ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফতোয়া হিন্দিয়া: ১/১৯৫) রমজান মাসে সেহেরি খাওয়াকেও অনেকে রোজার নিয়ত বলে গণ্য করেছেন। তবে সেহেরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৮১)

আরও পড়ুন: পবিত্র রমজানের সর্বোত্তম আমল

রোজার প্রচলিত নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم ‘নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামিকাল তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত রমজানের ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল করো, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

সেহেরির পর এভাবেও রোজার নিয়ত করা যেতে পারে
بِصَوْمِ غَدٍا نَوَيْتُ مِنْ شَهْرِ رَمَضَان 'বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামাদান' অর্থ: 'আমি রমজান মাসের আগামিকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি।'

৫. ইফতারের দোয়া
দোয়া কবুলের মুহূর্তগুলোর মধ্যে ইফতারের সময়ও একটি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না- ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক। ২. রোজাদার যতক্ষণ না ইফতার করে এবং ৩. মজলুমের। (ইবনে মাজা: ১৭৫২) হজরত মুয়াজ ইবনে জুহরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইফতারের সময় এই দোয়া পাঠ করতেন—اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু, অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি আপনারই জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনারই দেওয়া জীবিকা দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ: ২৩৫৮)

৬. ইফতারের পরের দোয়া
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (স.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন—ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ’ অর্থ: ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।’ (আবু দাউদ: ২৩৫৭)

আরও পড়ুন: ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখার গুনাহ

৭. অন্যের বাড়িতে ইফতার করলে দোয়া
اَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ وَاَكَلَ طَعَامَكُمُ الْاَ بْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ উচ্চারণ: ‘আফত্বরা ইনদাকুমুস সা-ইমূন ওয়া আকালা ত্ব‘আ-মাকুমুল আবরা-র, ওয়া সল্লাত আলাইকুমুল মালা-ইকাহ।’ অর্থ: ‘আল্লাহর ইচ্ছায় যেন (এমনিভাবে) রোজাদারগণ তোমাদের বাড়িতে ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশতাগণ যেন তোমাদের উপর রহমতের দোয়া করে। (মুসনাদে আহমদ: ১২১৭৭; সুনানুল কুবরা নাসায়ি: ১০১২৯/ ইবনুস সুন্নি: ২৯৯)

৮. শবে কদরের দোয়া
শবে কদরে যে দোয়াটি পড়ার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে সেটি হলো- اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর—তখন কোন দোয়া পড়বো?’ তখন রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে বলেন। (সূত্র: তিরমিজি: ৩৫১৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রমজানে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী যতবেশি সম্ভব আমল করার এবং বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর