পবিত্র রমজান শুরু হতে বেশি দেরি নেই। এই অবস্থায় কিছু কাজ নবীজির প্রিয় উম্মতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—চাঁদের হিসাব রাখা, শাবানের শেষ দুয়েকদিন রোজা না রাখা, দৈনন্দিন সব কাজ গুছিয়ে ইবাদতের জন্য সময় বের করা, দোয়া করা ও তওবা-ইস্তেগফার করা।
চাঁদের হিসাব রাখা
রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে দিনক্ষণ গণনা ও শাবান মাসের হিসাব রাখা একটি সুন্নত আমল। প্রকৃত অর্থে এটি রমজানকে বিশেষভাবে মূল্যায়নেরই একটি নিদর্শন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন— আল্লাহর রাসুল (স.) শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ: ২৩২৫) এমনকি তিনি শাবানের হিসাব রাখতে নির্দেশও দিয়েছেন, যেন রমজান আগমনের বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, তোমরা রমজানের জন্যে শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো। (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি, ২/১০৩)
বিজ্ঞাপন
শাবানের শেষের দিনগুলো রোজা না রাখা
শাবান মাসে অন্যান্য নেক আমলের পাশাপাশি সামর্থ্য অনুযায়ী রোজা রাখার চেষ্টা করা কর্তব্য। কারণ প্রিয়নবীজি অন্য মাসের চেয়ে শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন। কিন্তু শাবান মাসের ২৭ তারিখের পর আর রোজা রাখার প্রয়োজন নেই। হাদিসে রমজানের এক-দুই দিন আগে রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। (দ্র. সহিহ বুখারি: ১৯১৪)
আরও পড়ুন: শাবান মাসে যেসব আমল বাড়িয়ে দিতেন নবীজি
ইবাদতের জন্য সময় বের করা
রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে ইবাদতের জন্য সময় বের করা এবং ইবাদতে মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা রমজান হলো ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ফজিলত লাভের মাস। প্রস্তুতি সুন্দর না হলে এই ফজিলত লাভ কঠিন হতে পারে। সলফে সালেহিনদের জীবনীতে দেখা যায়, তারা রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, শাবান হলো রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস, সুতরাং এ মাসে একই আমল করা উচিত, যা রমজান মাসে প্রচুর পরিমাণে করা হয় অর্থাৎ রোজা এবং কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত। আর শাবান মাসে বেশি রোজা ও তেলাওয়াতের গুরুত্বারোপ এজন্য যে যাতে রমজান মাসের বরকত গ্রহণের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুতির জন্য রোজা ও কোরআন তেলাওয়াতে অভ্যস্ত হওয়া যায়। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা-২৫৮) এছাড়াও রমজানের প্রস্তুতি হিসেব সাহাবায়ে কেরাম তাদের সম্পদের জাকাত দিতেন, যাতে দরিদ্ররা রোজা রাখতে পারে এবং রমজান মাস যেন তারা আরো ভালোভাবে কাটাতে পারে। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা-২৫৮)
বরকতের দোয়া
এছাড়া রমজানের প্রস্তুতিমূলক বিশেষভাবে যে দোয়াটি পড়া সুন্নত—اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) রজব মাস শুরু হলে (অর্থাৎ রমজানের দুই মাস আগে থেকেই রমজান লাভের জন্য) এই দোয়া করতেন। (মেশকাতুল মাসাবিহ: ১৩৬৯)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ইফতার ও সেহেরির সময়সূচি ২০২৫
নিঃসন্দেহে এই দোয়া ছিল রমজানের জন্য নবীজি (স.)-এর মানসিক প্রস্তুতি। আর নবীজির অনুসরণে রজব মাস থেকে রজমানের প্রস্তুতি শুরু করবেন একজন মুমিন। যারা দুই মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেননি, তারা শাবান মাসে প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। আর শাবান মাস এখন বিদায় নেওয়ার পথে।
তাওবা-ইস্তেগফার
রমজানের আগে আগে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেওয়া বড় একটি নেক আমল। এতে ইবাদতের আগ্রহ বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং এই অবস্থায়ও যারা অবহেলায় সময় পার করছেন, তারা উপরোক্ত নেক আমলের পাশাপাশি অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিক তাওবা করে শেষ প্রস্তুতিটুকু নেবেন ইনশাআল্লাহ।
রমজানের চাঁদ দেখে দোয়া
হাদিসে নতুন চাঁদ দেখার একটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। তা হলো- اَللهُ أَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ، رَبِّىْ وَرَبُّكَ اللهُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদিত কর নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ।’ তালহা বিন উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন এই দোয়া পড়তেন। (তিরমিজি: ৩৪৫১)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি সুন্দরভাবে শেষ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।