নামাজ ফরজ ইবাদত। এই ইবাদতের জন্য অজু করা আবশ্যক। এমনকি ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলেও ওয়াক্তিয়া নামাজ ও জুমার নামাজ তায়াম্মুমের মাধ্যমে আদায় হবে না। তবে কিছু নামাজ ছুটে যাওয়ার আশংকায় তায়াম্মুম করা বৈধ।
যেমন- জানাজার নামাজ ও ঈদের নামাজ। এই দুই নামাজে কখনও যদি এমন হয় যে, অজু করতে গেলে জামাত ছুটে যাওয়ার আশংকা রয়েছে, তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েজ আছে। (কিতাবুল আছল: ১/১০৫; বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৮৪; খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/৩১; আলমুতিতুর রাজাবি: ১/১৬৬; ফতোয়ায়ে খানিয়া: ১/৫৪; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৭; রদ্দুল মুহতার: ১/২৪৬)
বিজ্ঞাপন
আতা (রহ) থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন– إذَا خِفْتَ أَنْ تَفُوتَكَ الْجِنَازَةُ وَأَنْتَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ فَتَيَمَّمْ وَصَلِّ. ‘অজু করতে গেলে যদি তোমার জানাজার নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে তুমি তায়াম্মুম করেই জানাজা নামাজ পড়ে নাও। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১১৫৮৬)
আরও পড়ুন: ফরজ গোসলের পর নামাজের জন্য অজু করতে হবে কি?
হজরত আব্দুর রহমান ইবনুল কাসিম (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- يَتَيَمّمُ وَيُصَلِّي إِذَا خَافَ. ‘(ঈদের নামাজ) ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ে নেবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৫৮৬৯)
হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন- يَتَيَمّمُ لِلْعِيدَيْنِ وَالْجِنَازَةِ. ‘ঈদ ও জানাজার ক্ষেত্রে (ছুটে যাওয়ার আশঙ্কায়) তায়াম্মুম করা যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৫৮৬৮; কিতাবুল আছল: ১/৩২০; আলমুহিতুল বুরহানি: ২/৫০২)
বিজ্ঞাপন
নফল নামাজের জন্য অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যাবে না। একইভাবে তাওয়াফ ও কোরআন স্পর্শ করার জন্যও অজু করা জরুরি। পানি থাকা অবস্থায় শুধু তায়াম্মুম করে এ সব ইবাদত করা যাবে না।
বেশ কিছু কারণে অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করার অবকাশ দিয়েছে ইসলাম। মূলত এক মাইলের মধ্যে পানি পাওয়া না গেলে বা পানি ব্যবহার অসুস্থতা বা বিপদের কারণ হলে তাদের জন্যই তায়াম্মুমের বিধান। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে, কিংবা নারীগমন করে থাকো, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা: ৪৩)
আরও পড়ুন: তায়াম্মুম করার নিয়ম কী, কখন করতে হবে?
তায়াম্মুমের পদ্ধতি হলো- উভয় হাতের কাপড়গুলো কনুইয়ের উপরে উঠিয়ে নেবে। তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়ার নিয়ত করে বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। নিজের উভয় হাতের তালুকে আঙুলগুলো খোলা রেখে মাটির ওপর রাখবে। হাতকে মাটির ওপর সামান্য ঘষবে। তারপর উভয় হাত উঠিয়ে ঝেড়ে ফেলবে। এরপর পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করবে। অতঃপর আগের মতো উভয় হাতের তালু আঙুল খোলা রেখে মাটির ওপর রেখে সামান্য ঘষবে। এরপর নিজের বাঁ হাত দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। এরপর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। তাতে তায়াম্মুম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর ফরজ, নফল সব ধরনের ইবাদত আদায় করতে পারবে। (কিতাবুল আসার লি আবি ইউসুফ: ৭৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৬০)
পবিত্র মাটি, কংকর, বালু, চুনা, মাটির তৈরি কাঁচা অথবা পাকা ইট, ধুলা, পাথর, ইটের তৈরি দেয়াল, পাকা বাসন, লাকড়ি বা কাপড়ে অথবা অন্যকোনো পবিত্র বস্তুতে ধুলা লেগে থাকলে এসব বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে। তবে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে, যে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে তার ওপরে ধুলা থাকা শর্ত নয়।
যেসব কারণে অজু ভেঙে যায়, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভেঙে যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৬০) এছাড়া পানি ব্যবহারে সক্ষম হয়ে গেলে, তায়াম্মুমের অনুমতি প্রদানকারী অপারগতা দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুম ভেঙে যাবে। যেমন—দুশমনের ভয় খতম হয়ে গেলে, রোগের আশঙ্কা শেষ হয়ে গেলে ইত্যাদি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/১৯২)